সেলিম আহমেদ, বিশেষ প্রতিনিধিঃ মৌলভীবাজার শ্রীমঙ্গলে প্রেমিকাকে পেতে ভালোবাসার পরীক্ষা দিতে গিয়ে বিষ পান অবশেষে প্রেমিকের মৃত্যু । প্রেমিকার মায়ের কাছে ভালোবাসার জন্য যখন প্রেমিক আকুতি জানায়, প্রেমিকার মা জানায় সে তার মেয়েকে কতটা ভালোবাসে তা প্রমাণের জন্য বিষ পানের আহবান জানায় । জবাবে নির্ভিক প্রেমিক সাথে সাথে কীটনাশক পান করে জীবন দিয়ে তার প্রমাণও দেয় । প্রেমিকাকে ভালবাসা জন্য প্রাণ বিসর্জনের এই ঘটনা ঘটে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে । ভালবাসার এমন বিয়োগান্তক ঘটনায় গোটা শ্রীমঙ্গল জুড়ে শোকের ছায়া নেমে এসেছে ।
জানা গেছে, শহরের সুরভীপাড়া এলাকার সামসু মিয়ার পুত্র অনার্স ২য় বর্ষের ছাত্র জুনেদ রহমানের সাথে উপজেলার মোহাজেরাবাদ গ্রামের হামিদ উল্লার কলেজ পড়–য়া মেয়ের সাথে ৪ বছর ধরে মন দেয়া-নেয়া চলছিল। তবে এসম্পর্ক মেয়েটির পরিবার কখনও মেনে নেয়নি । গত কয়েকদিন আগে পারিবারিক ভাবে জুনেদের বিয়ের কথা বার্তা চলছিল-এমন খবর পেয়ে মেয়েটি জুনেদকে জানিয়ে দেয় অন্যত্র বিয়ে করলে সে বিষপানে আত্মহত্যা করবে । এ নিয়ে জুনেদ দিশেহারা হয়ে পড়ে। অন্যদিকে, মেয়েটির পরিবারও জুনেদকে মেনে নিতে রাজী নয় ।
জুনেদের সহপাঠি কয়েকজন বন্ধু জানায়, এনিয়ে জুনেদকে মেয়েটি তার মাকে রাজি করাতে তাদের বাসায় যাবার জন্য পরামর্শ দিয়েছিল । এজন্য শুক্রবার (২৮ জানুয়ারী) বিকাল আড়াইটার দিকে জুনেদ, বন্ধুদের সাথে নিয়ে মেয়েটির বাড়ি যায় । এসময় জুনেদ বন্ধুদের বাড়ির বাহিরে রেখে সে একা বাড়ির ভেতর প্রবেশ করে । জুনেদ ভেতরে গিয়ে মেয়েটির মায়ের পা ধরে কাকুতি মিনতি করে তাদের সম্পর্ক মেনে নিতে বলে । এতে মেয়টির মা কর্ণপাত না করে আরো ক্ষুদ্ধ হয়ে উঠেন। মেয়েটির মা জুনেদকে বলে তার মেয়েকে সত্যিকারের ভালবাসলে তা প্রমাণ দিতে । প্রেমিকাকে পেতে কি করতে হবে জুনেদ জানতে চাইলে প্রেমিকার মা তাকে বিষ পান করার আহবান জানায় ।
এতে জুনেদ ভালোবাসার মানুষ প্রেমিকাকে পেতে তীব্র আবেগের বসে বাড়িতে রাখা কীটনাশকের বোতল খুলে পান করে । এতে বিষক্রীয়া শুরু হলে জুনেদ দৌঁড়ে বাহিরে এসে ঘটনা সবাইকে জানায় । এরপর তাকে দ্রুত শ্রীমঙ্গল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হলে- সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে তাকে মৌলভীবাজার সদর হাসপাতাল এবং পরে সিলেটের আল-রায়হান হাসপাতালে ভর্তি করানো হয় ।
সুত্র জানায় শনিবার (২৯ জানুয়ারী) সকাল সাড়ে ১০ টার দিকে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় জুনেদ মারা যায় । দুপুরে লাশ শ্রীমঙ্গল থানায় নিয়ে আসা হলে শত শত মানুষ সেখানে ভীড় করে। আত্মীয় স্বজন ও বন্ধুদের আহাজারিতে পুরো থানা চত্বরের পরিবেশ ভারী হয়ে ওঠে।
এ বিষয়ে শনিবার বিকালে যোগাযোগ করা হলে- জুনেদের প্রেমিকা সাংবাদিকদের জানায়, ঘটনার দিন বিকেলে জুনেদ আমাদের বাসায় এসে দীর্ঘসময় মায়ের পা ধরে কান্নাকাটি করে । এসময় সে আমাদের সম্পর্ক মেনে নিতে মাকে অনুরোধ করে । কিন্তু আমার মা তাকে জানায় তার বাবা মা যেখানে বিয়ে ঠিক করেছে সেখানেই বিয়ে করতে । এতে মা রাজি না হলে সে চলে যায় । বিষপানে আত্মহত্যার খবরটি তারা আজ জেনেছেন ।
প্রেমিকার মা সেলিনা বেগম বলেন, জুনেদ তাদের বাড়ি আসার সময়, বাড়িতে পুরুষ মানুষ ছিল না। এ ঘটনায় আমরা থানায় একটি জিডিও করি। এদিকে বিকালে- জুনেদের পরিবার পক্ষে জুনেদের প্রেমিকা, তার বাবা ও মাকে অভিযুক্ত করে একটি অভিযোগ নিয়ে থানায় আসার খবর পাওয়া গেছে। শ্রীমঙ্গল থানার ওসি (তদন্ত) হুমায়ন কবির বলেন, এঘটনাটি নিয়ে পুলিশ এরই মধ্যে মাঠে নেমেছে। তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।