বাজারে ক্রমান্বয়ে হয়ে দুর্ভেদ্যে হয়ে উঠেছে পেঁয়াজের মুল্য। পেয়াজের ঝাঁঝের চেয়ে এখন দামের ঝাঁঝ বেশি। নিত্যপ্রয়োজনীয় অন্যান্য পণ্যের দামে অনেকটা হাতের নাগালে আসলেও কিন্তু এই পণ্যটির দাম লাগামহীন। এদিকে পেঁয়াজের সাথে তাল মিলিয়েছে চালের বাজারও। আর নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের এরকম অসহনীয় মূল্যে ভোগান্তির শিকার হচ্ছে নগরীর সাধারণ মানুষ।
এক দিনের ব্যবধানে কেজিতে ২০ টাকা দাম বেড়ে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ ১২০ টাকায়, ভারতীয় পেঁয়াজ ৯০ টাকায় উঠেছে। শুক্রবার নগরীর বিভিন্ন পাইকারী এবং খুচরা বাজারগুলো ঘুরে এ তথ্য জানা যায় ।
অথচ গত বছর এ সময়ে পেঁয়াজের দাম ছিল এখনকার তিন ভাগের এক ভাগ। তথ্য অনুযায়ী,গত বছর এ সময়ে ভারতীয় ও দেশি পেঁয়াজে কেজি প্রতি দাম ছিল ২৫ থেকে ৪০ টাকার মধ্যে। অর্থাৎ প্রতি কেজি পেঁয়াজ কিনতে এখন নগরবাসীর খরচ বেড়েছে তিন গুণ বা তারও বেশি।
পেঁয়াজের এতো দাম কেন জানতে চাইলে পেঁয়াজ ব্যবসায়ী আলিমুল্লাহ বলেন, ভাই সামনে দাম আরও বাড়বো। গত সপ্তাহের তুলনায় প্রতিকেজি পেঁয়াজের দাম এ সপ্তাহে বাড়ছে ৪০ টাকা কইরা। গত সপ্তাহে আমরা ৯০-১০০ টাকা কেজি দরেও দেশি পেঁয়াজ বিক্রি করছি। এখন তো ১৩০ টাকার নিচে বিক্রি করা সম্ভব না।
দেশি পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধি তিনি আরো বলেন,এখন পেঁয়াজের মৌসুমের শেষ পর্যায়। আর পেঁয়াজের মজুতও ফুরিয়ে এসেছে। তাই পেঁয়াজের দাম বাড়ছে।
সাধারণত বছরের এ সময়টায় মুড়িকাটা পেঁয়াজ দিয়ে দুই মাসের চাহিদা পূরণ হয়। কিন্তু এবার সে পেঁয়াজের দেখা মিলছে না। পাইকারী ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, বৃষ্টিতে মুড়িকাটা পেঁয়াজের ফলনে তেমন সুবিধা করতে পারেনি কৃষকেরা। তাই যথাসময়ে এ পেঁয়াজ বাজারে উঠানো সম্ভব হচ্ছে না।
এদিকে বাজার ঘুরে দেখা যায়, শীতের সবজি ফুলকপি, শাল গম, শিম, লাউ,বাধাকপি এখন বাজারে ভরপুর। সঙ্গে করলা, ঢেড়স, বেগুন, পাকা ও কাঁচা টমেটা সবকিছুরই পর্যাপ্ত সরবরাহ রয়েছে। ফলে দামও কিছুটা সহনীয় পর্যায় রয়েছে।
তবে পেঁয়াজের মতো দাম বেড়েছে কাঁচামরিচের ও। প্রতিকেজি কাঁচামরিচের দাম বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ১৫০ থেকে ১৬০ টাকায়। যা এক দিন আগেও বিক্রি হয়েছে ১০০ থেকে ১২০ টাকা কেজি দরে।
তবে বেশকিছুদিন ধরে এক’শ টাকার ওপরে বিক্রি হওয়া পাকা টমেটোর দাম কিছুটা কমেছে। প্রতিকেজি পাকা টমেটো মানভেদে বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ১০০ টাকা কেজি দরে; যা গত সপ্তাহে ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। আর কাঁচা টমেটো আগের মতোই ৩০ থেকে ৪০ টাকা কেজি দরে পাওয়া যাচ্ছে।
এদিকে গত সপ্তাহের দামেই বিক্রি হচ্ছে শিম, লাউ, শালগম, করলা, মুলা। প্রতিকেজি শিম বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৪০ টাকা দরে। লাউ ৩০ থেকে ৫০ টাকা, শালগমের কেজি ২৫ থেকে ৩০ টাকা, মূলা ১৫ থেকে ২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। ৩০ থেকে ৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হওয়া বেগুনের দাম বেড়ে হয়েছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা।
অন্যদিকে মাছ,মাংস,ডিমের দাম ও রয়েছে কমতি পথেই। আগের মতই ব্রয়লার মুরগী বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকা দরে,লাল মুরগী কেজিতে ২৩০-২৫০ টাকা দরে। এদিকে মাছের দামও মানভেদে এবং আকারভেদে বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে পেঁয়াজের সাথে সাথে তাল মিলিয়েছে চালের বাজার ও গত এক সপ্তাহে দু’দফায় দাম বেড়েছে। অথচ নতুল চাল বাজারে চলে আসছে।
খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, গত সপ্তাহের তুলনায় এ সপ্তাহে সব ধরনের চালের দাম কেজিতে তিন থেকে চার টাকা বেড়েছে। ৬২ থেকে ৬৪ টাকা কেজি দরে বিক্রি হওয়া সরু চালের দাম বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬৬ থেকে ৭০ টাকায়। নাজিরশাইর চালের দাম বেড়ে ৭০ টাকা ছুঁয়েছে। মোটা চাল কেজিতে বিক্রি হচ্ছে ৫৫ থেকে ৫৮ টাকা দরে, যা এক সপ্তাহ আগে ৫০ টাকা দরে।
নতুন চাল আসার পরও চালের দাম না কমায় অসন্তোষ দেখা দিয়েছে ভোক্তাদের মধ্যে। মাসদাইর বাজারে চাল কিনতে আসা রিকশা চালক আবুল মিয়া বলেন,একটার পর একটা জিনিসের দাম বাড়তেই আছে। এখন পেঁয়াজের দাম ও ১০০-১২০ টাকা দরে।
আমরা গরীব,অশিক্ষিত মানুষ দিন আনি দিন খাই; কিন্তু এই যে দামের অবস্থা চলতাছে এমনে চলতে থাকলে একদিন আমাগো মত মাইনষেগো না খাইয়া মরতে হইবো।
বাজার করতে এসে চাকুরীজীবি আমিনুল্লাহ জানান, কেন পেঁয়াজের দাম ১০০ টাকা হবে? এখন আবার চালের দাম বেড়েছে। অথচ নতুন ধান উঠেছে। বাজারে নতুন চালও সরবরাহ হচ্ছে। তাই চালের দাম তো কমার কথা। কিন্তু দাম না কমে উল্টো বেড়েছে। এভাবে চলতে থাকলে তো দেশে দুর্ভিক্ষ দেখা দেবে।
চালের দাম বৃদ্ধি নিয়ে নিতাইগঞ্জের চাল ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, আমাদের তো বাড়তি দামেই কিনতে হচ্ছে। প্রতি কেজি মোটা চাল ৪৪-৪৫ টাকা, মাঝারি চাল ৫৩-৫৫ টাকা এবং সরু মিনিকেট চাল মানভেদে ৫৮-৬০ টাকা করে। সমস্যা হচ্ছে যারা ধান থেকে চাল বানাচ্ছে তারা যদি দাম না কমায় আমাদের পক্ষে তো আর চালের দাম কমানো সম্ভব না।