সিদ্ধিরগঞ্জ প্রতিনিধি: আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে সিদ্ধিরগঞ্জের চুনা কারখানা মালিক ও তাদের পরিবার। গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর চুনা কারখানা মালিকরা পড়েছেন চরম বিপাকে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় দায়ের করা একাধিক হত্যা মামলার আসামি করা হয়েছে চুনা শিল্প মালিক ও তাদের পরিবারের সদস্যদের। এতে ভয়ে তারা পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। পরিস্থিতির সুযোগে চুনা শিল্পের চাঁদাবাজি ও ব্যবসার লাভের অংশীদার হতে একটি সুবিধাবাদী মহল পরিকল্পিতভাবে চুনা কারখানা মালিকদের মামলার ফাঁদে ফেলেছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
জানা গেছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গত ২০-২১ জুলাই সিদ্ধিরগঞ্জে গুলিবিদ্ধ হয়ে যারা নিহত হয়েছেন, তাদের স্বজনরা বাদী হয়ে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর হত্যা মামলা করেছেন। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক এমপি শামীম ওসমানকে প্রধান করে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের ৮ শতাধিক নেতাকমীর নাম উল্লেখ ও দেড় হাজারের অধিক লোককে অজ্ঞাত আসামি করে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় ১ ডজনের বেশি হত্যা মামলা করা হয়েছে। এসব একাধিক মামলায় এজাহার নামীয় আসামি করা হয়েছে চুনা কারখানা মালিক চাঁন মিয়া, আব্দুল হাই, আনোয়ার ইসলাম, ওমর ফারুক, খোরশেদ, শহিদ হাসান বিটু ও শরীফসহ ১০ জনকে। একই সাথে আসামি করা হয়েছে কারখানা মালিকের ছেলে ও কারখানার ম্যানেজারকে।
একাধিক কারখানা মালিক জানান, চুনা শিল্প থেকে চাঁদাবাজি ও ব্যবসার লাভের একটি অংশ নিতে একটি মহল পরিকল্পিতভাবে তাদেরকে হত্যা মামলার আসামি করেছে। থানা এলাকার ১৪ টি মধ্যে ১০ টি কারখানা মালিককে আসামি করায় এটা পরিস্কার যে একটি মহলের পরিকল্পনা। তাছাড়া মামলা হওয়ার পর থেকেই স্থানীয় এক শীর্ষ বিএনপি নেতার অনুসারিরা কারখানা ও তাদের বাড়িতে গিয়ে বলে আসছে ওই নেতার সাথে যোগাযোগ করতে। নেতার কথা শোনলে মামলা থেকে নাম বাদ করিয়ে দেওয়া হবে। কারা এসে কোন নেতার সাথে দেখা করতে বলছে হামলা মামলার ভয়ে তাদের নাম প্রকাশ করতে চান নি কারখানা মালিকরা।
হীরাঝিল এলাকার মেসার্স রনি লাইমসের মালিক চাঁন মিয়া জনান, দীর্ঘ দিন ধরেই চুনা শিল্পে চাঁদাবাজি চলে আসছে। চাঁদাবাজির প্রতিবাদ করায় গত চারদলীয় জোট সরকার আমলে শরীফ লাইমসের মালিক সুন্দর আলীকে গুলি করে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। তাকেও হত্যার উদ্দেশ্যে দুটি গুলি করেছিল। আল্লাহর রহমতে ভাগ্যগুণে তিনি বেঁচে গেছেন। একই কারণে ২০০৮ সালে গুলি করে হত্যা করা হয় ভাই ভাই লাইমসের মালিক আবু তালেবকে। চাঁদাবাজি ও ব্যবসার লাভের অংশীদার ও চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ নিয়ে কারখানা মালিকরা বার বার সন্ত্রাসী হামলা ও হত্যাকা-ের শিকার হওয়ায় সবাই একজোট হয়ে চাঁদা দেওয়া বন্ধ করে দেন। প্রায় ২ বছর বন্ধ থাকার পর ২০১১ সাল থেকে কয়েকজন মালিককের যোগসাজশে আবার চাঁদাবাজি শুরু হয়। তবে তিনি চাঁদা না দেওয়ার পক্ষে অনড় থাকেন। এতে তার উপর অনেক হুমকি ধমকি এমনকি হামলাও হয়েছে। তবু তিনি চাঁদা দেননি। অন্যরা দিত। তবে আগের তুলনায় অনেক কম। চাঁদা এবং চুনা শিল্পির নিয়ন্ত্রন নিতেই বিএনপির এক নেতা সব চুনা কারখানা মালিকের বিরুদ্ধে মামলা করিয়েছে বলে মন্তব্য করেন চাঁন মিয়া। তবে ওই নেতার নাম প্রকাশ করতে অনিহা প্রকাশ করেন তিনি।
এ বিষয়ে একটি হত্যা মামলার বাদী শাহনাজ বলেন, মামলায় কাদেরকে আসামি করা হয়েছে আমি জানিনা। কয়েকজন লোক আমার বাসায় এসে আমার স্বামী মিলন হত্যা মামলা করার জন্য একটি কাগজে স্বাক্ষর দিতে বলে। তারা আমি ও আমার সন্তানদের খরচ চালানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে কিছু টাকা দিয়ে স্বাক্ষর নেয়। অন্য কয়েকজন বাদীর সাথে কথা হলে তারাও বলেন, মামলায় কাদেরকে আসামি করা হয়েছে তা তারা জানেন না।
মামলার বিষয়ে জানতে চাইলে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ওসি আল মামুন বলেন, মামলা করার অধিকার সবার আছে। পুলিশ তদন্ত সাপেক্ষে অপরাধির বিরুদ্ধে আইনগত ব্যাবস্থা গ্রহণ করবে। তবে নিরাপরাধ কাউকে হয়রানী করা হবে না।