সিদ্ধিরগঞ্জ প্রতিনিধি : অজ্ঞান পার্টির কপ্পরে পরে খুন হয় জাহিদুল ইসলাম। এঘটনার সঙ্গে জড়িত সাতজনকে গ্রেপ্তার করে র্যাব-১১। তাদের কাছ থেকে উদঘাটন হয় লোমহর্ষক তথ্য। অপহরণ ও যাত্রী বহনের আড়ালে দীর্ষ দশ বছর ধরে এঅপরাধ করে আসছে চক্রটি। মূলহোতা মো: সাইফুল ইসলামসহ এই চক্রের সাত সদস্যকে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে র্যাবের দুইটি টিম। গতকাল মঙ্গলবার দুপুর দেড়টায় সিদ্ধিরগঞ্জের আদমজী সদর দপ্তরে সংবাদ সম্মেলনে এই চক্রের অপরাধের ধরণ তুলে ধরেন র্যাব-১১ এর অধিনায়ক লে: কর্ণেল তানভীর মাহমুদ পাশা(পিএসসি)।
গ্রেপ্তাররা হলো- গাইবান্দা জেলার সাঘাটা থানার আদর্শগ্রামের মো: গফুর আলির ছেলে মোঃ সাইফুল ইসলাম (৩০), একই জেলা থানার দুর্গাপুর গ্রামের ইব্রাহীম খলিলের ছেলে মোঃ রনি মিয়া ওরফে টনি (৩০), পঞ্চগড় জেলার সদরের মসজিদপাড়া এলাকার মৃত গিয়াস উদ্দিনের ছেলে মোঃ শামীম (৪০), রংপুর জেলার পীরগাছা থানার অন্যদানগর এলাকার মো: ইব্রাহীম শেখের ছেলে আব্দুল মান্নান শেখ (২২), নাটোর জেলার সিংড়া থানার পুটিমারী গ্রামের মো: লস্কর প্রামাণিকের ছেলে মোঃ সুমন (৩৮), একই জেলার বাগাতিপাড়া থানার গালিমপুর গ্রামের মৃত তাইজ উদ্দিনের ছেলে মোঃ মামুনুর রশিদ (৩৫) ও গাজীপুর জেলার জয়দেবপুর থানার চান্না বৌবাজার এলাকার মৃত ইয়াছিনের ছেলে মোঃ হাবিবুল্লাহ (৫২)।
র্যাব অধিনায়ক জানান, রূপগঞ্জের টেংরারটেক এশিয়ান হাইওয়ে সড়কের পাশের ডোবা থেকে গত ২১ জুলাই জাহিদুল ইসলামের (৫০) লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। জাহিদুল নাটোর জেলার সিংড়া থানার এখলাসপুর গ্রামের বাসিন্দা। এঘটনায় নিহতের ছেলে কাজল (২১) বাদী হয়ে অজ্ঞাত আসামি করে রূপগঞ্জ থানায় ২৫ জুলাই হত্যা মামলা করেন। র্যাবের গোয়েন্দা দল ছায়া তদন্ত শুরু করে হত্যার রহস্য বেরকরে ১৬ আগস্ট রাতে দুইটি দল দেশের বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালিয়ে মূলহোতাসহ সাত জনকে গ্রেপ্তার করে।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানায়, গত ১৮ জুলাই রাতে সাইফুল ইসলামের নেতৃত্বে ঢাকার কেরাণীগঞ্জ হতে ৯ জন ও নাটোর থেকে একটি ট্রাক নিয়ে আসার পাঁচজন টাঙ্গাইলের এলেঙ্গা এসে মিলিত হয়। পরে ১৯ জুলাই চলে যায় কুমিল্লার পদুয়ার বাজারে। সন্ধ্যার পর চক্রটি ঈদে ঘরমুখো যাত্রীদের কম টাকায় পরিবহনের আশ^াস দিয়ে জাহিদুল ইসলাম তার সঙ্গী আলম (৫০), আরিফ (৩০), শরীফুল ইসলাম (৫০), সবুজ (৩০) এই পাঁচজন যাত্রীকে তাদের ট্রাকে উঠিয়ে নাটোরের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। পথে নেশাজাতীয় পানি খাইয়ে ওই চারজনকে অজ্ঞান করে তাদের কাছে থাকা সবকিছু লুটে নেয়। একজন নেশাজাতীয় পানি পান না করায় বেধড়ক মারধর করে দাউদকান্দি সেতু পার হয়ে তিন জনকে অজ্ঞান অবস্থায় ট্রাক থেকে ফেলে দেয়। কিছুদূর আসার পর অজ্ঞান না হওয়া যাত্রীকেও ফেলে দেয়। টাকা কম থাকায় অজ্ঞান অস্থায় উপুর্যপুরি কিল ঘুষি ও মারধর করে সবশেষে জাহিদুল ইসলামকে রূপগঞ্জের ওই ঘটনাস্থলে ঝোপঝাড়ের মধ্যে ফেলে দেয়। ঔষধের বিষাক্ত প্রভাব মারধর করায় জাহিদুল ইসলামের মৃত্যু হয়।
অধিনায়ক আরো জানায়, তারা মূলত অজ্ঞান পার্টির সদস্য। অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায় করার অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছে প্রায় দশ থেকে বার বছর ধরে দেশের বিভিন্ন জায়গায় তারা যাত্রীদের অজ্ঞান করে সর্বস্ব হাতিয়ে নিত। একই দিন তারা গাজীপুর চৌরাস্তায় তিনজন ব্যক্তিকে অজ্ঞান করে ১৩ হাজার টাকা এবং ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে এক গরু ব্যবসায়ীকে অজ্ঞান করে ১ লাখ ৩৪ হাজার টাকা লুট করে। চক্রের মূলহোতা সাইফুল ইসলামসহ তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা থাকার তথ্য পাওয়া গেছে ক্রাইম ডাটাবেজ ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম বিশ্লেষণ করে। এচক্রের অধিকাংশ সদস্যের বিরুদ্ধে চুরি, ধর্ষণ, জুয়া আইনে একাধিক মামলা রয়েছে। গ্রেপ্তার সবাইকে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার নিকট হস্তান্তর কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন।