সোনারগাঁও প্রতিনিধি ঃ নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও উপজেলার সনমান্দি, সাদিপুর ও জামপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায়
ব্রহ্মপুত্র নদীর তলদেশ থেকে একাধিক ড্রেজার মেশিন দিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়,সনমান্দি থেকে গুলনগর ও আলমপুরার মাঝামাঝি দৌলরদি, সাদিপুরের শেষ মাথায় ও জামপুরে ব্রক্ষপুত্র নদের পাড় ঘেষে ১২ থেকে ১৬ ইঞ্চি মাপের পাইপের একাধিক লোডিং ড্রেজার দিয়ে সরকারি কোন অনুমতিপত্র না নিয়েই বালু উত্তোলন করে এ্যামপেয়ার স্টীল মেইলে বিক্রি করছে কিছু প্রভাবশালী ব্যাক্তি।
স্থানীয়রা জানান, সনমান্দি ও সাদিপুর ইউনিয়নের মধ্য দিয়ে বয়ে যাওয়া ব্রক্ষপুত্র নদী থেকে ইজারা ছাড়াই অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলন করছে অলিপুরা বাজার পঞ্চমী ঘাট গুলনগর এলাকার কাজী মাসুদের নেতৃত্বে প্রভাবশালী বালু খেকোরা।
অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের জন্য,সোনারগাঁও থানা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আলী হায়দারের দায়িত্বে পড়েছে সনমান্দি ইউনিয়ন এলাকা।
তারা ভাগাবাগি করেই কাজটি করছে। ফলে রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার এবং হুমকির মুখে পড়েছে এই নদীর দুই পাড়ের পার্শ্ববর্তী গ্রাম ও ফসলি জমি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তি জানান,সাদিপুর ইউনিয়নের গুলনগর এলাকার সাবেক ইউপি সদস্য মৃত কাজী জসিম উদ্দিনের ছেলে কাজী মাসুদ ও জামপুর ইউনিয়নের হাতুরাপাড়া এলাকার ইকবাল ও সনমান্দি ইউনিয়নের বাসিন্দা উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আলী হায়দার সরকার দলীয় নাম ব্যবহার করে একটি চক্রের মাধ্যমে সন্ত্রাসী কায়দায় অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছে,তাই আমাদের বসতভিটে নিয়ে আমরা এখন ভাঙ্গনের হুমকিতে আছি।বালু উত্তোলনের প্রতিবাদে করলে তারা মারধর সহ প্রাণনাশের হুমকি দেয় তাই আমরা সবসময় আতঙ্কে থাকি।
নদীর দুই অংশের স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ,দীর্ঘদিন ধরে নিয়ম উপেক্ষা করে প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে অবৈধভাবে বালু তুলছেন এই প্রভাবশালী মহলটি।
উল্লেখ যে,নদী খনন প্রকল্পের আওতাধীন সেনাবাহিনী নিয়ম মাফিক নদী খননের সরকারি কর্মাদেশ পেয়ে কিছু ছোট লোডিং ড্রেজার দিয়ে গভীরে পাঁচফুট নদী খনন করছে। কিন্তু এই সুযোগে মাসুদ, ইকবাল ও হায়দার গ্রুপ ১২ থেকে ১৬ ইঞ্চি লোডিং কার্টার মেশিন বসিয়ে ২৫ থেকে ৩০ ফুট গভীরে বালু উত্তোলন করছে যার ফলে দু’পাশে থাকা জমি ও বাড়ি-ঘর, মসজিদ, এবং সর্বসাধারণের যাতায়াতের রাস্তা এখন ভাঙ্গনের হুমকির মূখে। স্থানীয় প্রশাসন থেকেও অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলন বন্ধের কোন পদক্ষেপ চোখে পড়েনি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গুলনগর গ্রামের কৃষক জানায়, এখানে বালু উত্তোলনের ফলে আমাদের অনেক ফসলি জমি ও বসত ভিটে হুমকির মুখে, অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধের দাবিতে এলাকাবাসী সোনারগাঁও উপজেলা নির্বাহী অফিসারের অফিসে গিয়ে তার সাথে কথা বলি। কিন্তু অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের বিষয়ে প্রশাসন থেকে এখনো কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি।
স্থানীয় প্রশাসনের নাকের ডগায় অবৈধভাবে বালু উত্তোলন চললেও চক্রটির বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। কোনো নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে (প্রতিদিন ৪০ থেকে ৫০টি বাল্কহেড) এভাবে বালু তোলায় হুমকির মুখে পড়েছে উপজেলার সাদিপুর, জামপুর ও সনমান্দী ইউনিয়নের বেশকিছু গ্রাম এবং কৃষি জমি। তারা দিনরাত ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন করে প্রকাশ্যে বিক্রি করছে এবং সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।
বালু উত্তোলনের হোতারা ক্ষমতাসীন দলীয় ও প্রভাবশালী হওয়ায় গ্রামবাসীরা প্রকাশ্যে মুখ খুলতে পারছেন না।
নিয়মানুযায়ী,বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন-২০১০ এর ধারা ৫ এর ১ উপধারা অনুযায়ী পাম্প বা ড্রেজিং বা অন্য কোন মাধ্যমে ভূগর্ভস্থ বালু বা মাটি উত্তোলন করা যাবে না। ধারা ৪ এর (খ) অনুযায়ী সেতু, কালভার্ট, ড্যাম, ব্যারেজ, বাঁধ সড়ক, মহাসড়ক, বন, রেললাইন ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সরকারি ও বেসরকারি স্থাপনা হলে অথবা আবাসিক এলাকা থেকে সর্বনিম্ন এক কিলোমিটারের মধ্যে বালু উত্তোলন নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে কাজী মাসুদের সাথে মুটোফোনে জানতে চাইলে তিনি বলেন, অবৈধভাবে বালু উত্তোলন কাজে তিনি জড়িত নয়। এসময় তিনি বলেন, যে ঠিকাদার নদী থেকে বালু উত্তোলন করছেন স্থানীয় পঞ্চমীঘাট বাজারে ওই ঠিকাদারের অফিস রয়েছে। ওই অফিসে গিয়ে এই বিষয়ে জানার কথা বলেন কিন্তু সংবাদ প্রতিনিধি পঞ্চমীঘাট বাজারে গিয়ে ঠিকাদারের অফিসের কোনো অস্তিত্ব খুঁজে পায়নি।