কামরুজ্জামান (শাওন ) : সর্বাত্মক লকডাউনে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চলাচল বন্ধের সিদ্ধান্তে সৌদি আরবে বসবাসরত অনেক বাংলাদেশি দেশে ফেরার সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছিলেন। টিকিট বাতিল করেছিলেন অনেকে। হঠাৎ করেই ১৭ এপ্রিল বিশেষ ফ্লাইট পরিচালনার অনুমতি দেয় বাংলাদেশের বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)।
এ অবস্থায় অনেক প্রবাসী আবার দেশে ফেরার টিকিট কাটেন। তবে সৌদি আরব বাংলাদেশ বিমানের ফ্লাইটের ল্যান্ডিং পারমিশন (অবতরণের অনুমতি) না দেওয়ায় অনেকেই হতাশ হয়ে পড়েন। বাতিল করেন তাদের দেশে ফেরার টিকিট।
তাদের মধ্যে একজন ছিলেন ব্যতিক্রম। তার নাম শাহীন রেজা। বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়। ফ্লাইট চালুর সংবাদ শুনেই ঝুঁকি নিয়ে টিকিট কেটে রেখেছিলেন। শর্ত মেনে করেছিলেন কোভিড-১৯ পরীক্ষাও। পণ করেছিলেন বাংলাদেশে প্রথম যে ফ্লাইট যাবে সেটিতেই দেশে ফিরবেন। সেই অনুযায়ী টিকিট কাটেন সৌদির জেদ্দা থেকে ঢাকাগামী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বিজি-৪০৩৬ ফ্লাইটের। ফ্লাইটটি ঢাকা থেকে যাত্রী নিয়ে জেদ্দা যাচ্ছিল, সেখান থেকে আবার যাত্রীদের নিয়ে ঢাকায় ফেরার শিডিউল ছিল। বাংলাদেশ থেকে জেদ্দার উদ্দেশ্যে ফ্লাইটটি ছাড়ার আগেই জেদ্দার বিমানবন্দরে হাজির হন শাহীন। বসেছিলেন ফ্লাইটের অপেক্ষায়। অবশেষে ফ্লাইট এল। একমাত্র যাত্রী হিসেবে দেশে ফেরার সুযোগ পেলেন তিনি।
শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সূত্রে জানা গেছে, জেদ্দা থেকে ঢাকায় আসা বিমানটি ছিল বোয়িং-৭৮৭-৮ (৭৮৮) ড্রিমলাইনার মডেলের। এতে আসন ছিল মোট ২৫৪টি। আর ফ্লাইটের একমাত্র যাত্রী ছিলেন শাহীন।
নিজের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে শাহীন রেজা ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি সৌদি আরবের মক্কায় একটা স্কুলে চাকরি করি। প্রতি বছর রমজান মাসে স্কুল দুই মাসের ছুটি থাকে। সেই ছুটিতেই দেশে ফিরি। কিন্তু গত বছরের রমজানে করোনার কারণে দেশে ফিরতে পারিনি, তাই এবার আসার পরিকল্পনা করি। ১৫ এপ্রিল আমি বিমানের একটি টিকিট কাটি, তখনও বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চলাচল বন্ধ। লকডাউনে এই ফ্লাইটও মিস হতে পারে এটি জেনেও টিকিট কিনে রেখেছি।
রেজা বলেন, এজেন্টের মাধ্যমে টিকিট কেনার পর আমি বিমানের সৌদি অফিসে যাই। সেখানে আমাকে বাংলাদেশে ফিরে ১৪ দিনের কোয়ারেন্টাইনে থাকার বিষয়টি জানানো হয়। আমি বলি যেকোনো মূল্যে দেশে ফিরতে চাই, কোয়ারেন্টাইনে যেতে আমার সমস্যা নেই। এই মর্মে একটি কাগজে সইও করি।
এরপর ১৮ এপ্রিল জেদ্দার বিমানবন্দরে গিয়ে উপস্থিত হই। সেখানে বিমানের পক্ষে চেক-ইন কাউন্টারে ছিলেন দুইজন সৌদি নাগরিক। তারা আমাকে বলেন, ‘তুমি অনেক ভাগ্যবান, একা অত বড় ফ্লাইটে যাবে।’ তারা দুইজন আমার সঙ্গে সেলফি তুলে এবং মাত্র ৩০ মিনিটের মধ্যে আমি প্লেনের চড়ে দেখি ভেতরে আমি একাই।
ফ্লাইটের ভেতর একা, অভিজ্ঞতাটা কেমন ছিল? রেজা বলেন, আমি প্লেনে প্রবেশ করতেই বিমানবালারা আমাকে আমন্ত্রণ জানান, আমি সামনের আসনে বসলাম। তারা বলল আমিই একমাত্র যাত্রী। আমি নাকি খুব ভিআইপিভাবে দেশে ফিরছি। সাধারণত এই রুটের ফ্লাইটে একবার খাবার পরিবেশন করা হয়। তারা আমাকে দুবার খাবার পরিবেশন করেন। বার বার জিজ্ঞেস করেন আমার কিছু লাগবে কি না? সবমিলে অভিজ্ঞতাটা চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।
শাহীন রেজা বর্তমানে হজ ক্যাম্পে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে আছেন। তবে তিনি তার কোয়ারেন্টাইনের দিনক্ষণ কিছুটা শিথিল করার জন্য অনুরোধ করেছেন। তিনি বলেন, আমি ফ্লাইটে একা এসেছি, ফ্লাইট থেকে নেমে বাসেও একা ছিলাম, কারও সংস্পর্শে আসিনি। যদি আমার কোয়ারেন্টাইনটা কিছুদিন কমানো হতো তাহলে ছোট্ট মেয়ের সঙ্গে আরও কয়েকটা দিন বেশি থাকতে পারতাম।
শাহীনকে বহনকারী বিমানের ফ্লাইটটি ১৮ এপ্রিল সকাল ৮টায় ঢাকায় এসে পৌঁছায়।
এদিকে দেশে চলমান বিধিনিষেধ আরও এক সপ্তাহ বাড়ানো হয়েছে। ফলে অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক রুটের ফ্লাইট চলাচলও আরও এক সপ্তাহের জন্য বন্ধ থাকবে। অর্থাৎ ২১ এপ্রিল থেকে পরবর্তী সাত দিন কোনো শিডিউল ফ্লাইট চলাচল করবে না বলে জানিয়েছে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের বেবিচক।