শহর প্রতিনিধি : কারনে কথা কাটাকাটি থেকে ঝগড়া। এরপর নিজ নিজ গ্রুপের সদস্যদের ডেকে এনে স্বশস্ত্র মারামারি। কোন কোন ক্ষেত্রে পিটিয়ে কিংবা কুপিয়ে হত্যার মতো ঘটনা ঘটছে নারায়ণগঞ্জে। প্রত্যক্ষদর্শী ও ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, কিছু দিন ধরে বেড়ে গেছে কিশোর গ্যাংয়ের উৎপাত। নারায়ণগঞ্জের ভয়ংকর এক আতংকের নাম কিশোর গ্যাং লিডার ইভন বাহিনী। কিশোর বয়স থেকেই নেশার সাথে জড়িয়ে পরে ইভন। তখন থেকেই নেশার টাকা যোগাতে নিরহ মানুষকে মারধর করে সর্বস্ব কেড়ে নেয় ইভন ও তার বাহিনী। ইতিমধ্যেই হত্যা, মাদক সহ একাধিক মামলায় জেল খাটা আসামী সে। শহরের ইসদাইর এলাকার আজম বাবুর ছেলে এই ইভন।
গত ৪ ডিসেম্বর ইয়াবাসহ কিশোর গ্যাং লিডার ইভানকে (২৫) তার দুই সহযোগী সহ গ্রেফতার করে ফতুল্লা মডেল থানা পুলিশ। পরে সেই মামলা থেকে জামিন বেড়িয়ে আবার শুরু করে তার সন্ত্রাসী কার্যকলাপ। এর আগে ২০১৩ সালে কিশোর ফুটবলার রাসেলকে পুর্ব ইসদাইর জনতা টেক্সটাইল মিলের সামনে প্রকাশ্যে জনগণের সামনে হত্যা করে ইভন ও তার বাহিনী। হত্যার নেপথ্যের কারন ছিল আধিপ্যত বিস্তার ও বড় ভাই ছোট ভাই নিয়ে। এই হত্যার পর থেকেই তাকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। স্থানীয় প্রভাবশালীদের শেল্টারে গড়ে তুলেছে তার বিশাল এক কিশোর গ্যাং বাহিনী। এই গ্যাং এ রয়েছে লেডি সন্ত্রাসী ও মাদকসেবী জান্নাত, প্রশান্ত, সুমন, অন্তর, শুভ, রায়হান, লিটন সহ আরো অনেকে। শহরের প্রানকেন্দ্র চাষাঢ়া জুরে চলে তাদের অপরাধমূলক কার্যকলাপ। মাদক সেবন করে বেপোরোয়াভাবে চলাফেরা করাই তাদের কাজ। এই মাদক সেবনের টাকা যোগাতে মানুষকে বাল্কমেইলিং করতেও ছাড়েনা তারা। সন্ত্রাসী ও মাদকের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করায় ইউরোপ প্রবাসী এক ব্যবসায়ীকে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করে সন্ত্রাসী ইভন বাহিনী।
অভিযোগ রয়েছে তার কাছে অর্থ আদায়ের। এই বছরের জানুয়ারী মাসে ফতুল্লার ইসদাইর এলাকায় লেপ তোষক বিক্রেতা কামালের দোকানে হামলা চালিয়ে ধারালো ছুরির ভয় দেখিয়ে এক লাখ ৯৩ হাজার টাকাসহ ক্যাশ বাক্স লুটে নেয় ইভন ও তার
সহযোগীরা। এ ব্যাপারে ভুক্তভোগী কামাল থানায় অভিযোগ করলে উল্টো তাকে প্রাননাশের হুমকি দিয়ে যায় ইভন বাহিনী।
এছাড়াও স্থানীয় স্কুল ছাত্র ফারদিনকে অমানুষিক নির্যাতন ও ছুরিকাঘাতে আহত করে দুই ঘন্টা টর্চার সেলে ফেলে রাখে ইভন বাহিনী। কোন মতে প্রানে বেঁচে যায় ফারহান। এদিকে ইভন বাহিনীর লেডি সন্ত্রাসী জান্নাত,প্রশান্ত ও সুমন নিজেদেরকে সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে দাবিয়ে বেড়ায় পুরো শহর। এই পরিচয়ে তারা মানুষকে হয়রানী ও বাল্কমেইলিং করে। থানায় গিয়ে মানুষের নামে মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে। তাদের চলাফেরা দেখলেই বুঝা যায় তারা কতটা ভয়ংকর। সারাদিনই থাকে তারা নেশায় আশক্ত। গত ১১ মার্চ রাতে বাল্কমেইলিং করার চেষ্টা করে এক ব্যবসায়ীকে। পরে এই কিশোর গ্যাংয়ের আবদার না মানায় নাটক সাজিয়ে মিথ্যা অভিযোগ দায়ের করেন তাদের বিরুদ্ধে। সদর মডেল থানায় গিয়ে নিজেদের সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে পুলিশকেও হুমকি ধামকি দিয়ে কাজ করানোর অভিযোগ রয়েছে এই কিশোর গ্যাং বাহিনীর বিরুদ্ধে। অভিযোগে তারা উল্লেখ্য করে রাত ১২ টায় ইভনকে শহীদ নগর এলাকায় নিয়ে মারধর করে।
ওই এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা সাইদুল হাসান সহ একাধিক ব্যক্তি জানান এই এলাকায় রাতে কোন মারামারি বা কাউকে মারধর করতে আমরা দেখিনি এবং শুনিওনি। যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়েছে তারা ওই সময় এই এলাকায় ছিলেন না বলে জানায় একাধিক ব্যক্তি। একজন হত্যা সহ একাধিক মামলার আসামী ইভন ও তার সহযোগী মাদক সেবনকারীরা কিভাবে থানায় ঘুরে বেড়ায়। এখন প্রশ্ন দেখা দিয়েছে জনমনে।
এ ব্যাপারে স্থানীয় কয়েকজন সিনিয়র গনমাধ্যম কর্মী জানান, জান্নাত, প্রশান্ত ও সুমন এরা কথিত সাংবাদিক। এরা আসলে গনমাধ্যমের কেউ না। ভুইফোর পত্রিকার নাম বিক্রি করে চলে এরা। প্রকৃতপক্ষে এরা মাদকসেবী ও কিশোরগ্যাং পরিচালনাকারী। সংবাদ মাধ্যমের এদের কার্যকলাপে সুনাম ক্ষুন্ন হচ্ছে। গনমাধ্যম নাম বিক্রি করলে প্রশাসনকে তাদের গ্রেফতারের দাবি জানান সাংবাদিকরা।
শুধু মাত্র নারায়ণগঞ্জ শহরেই অর্ধশতাধিক কিশোর গ্যাং রয়েছে। বিভিন্ন নামে এসব কিশোর গ্যাং একেক পাড়া মহল্লা শাসন করে। তাদের কাছে অস্ত্র থাকায় ভয়ে মুখ খুলে না কেউ। সম্প্রতি কিশোর গ্যাংয়ের হাতে নিহত হয়েছেন কয়েকজন। সচেতন মহলের মতে, কতিপয় রাজনীতিকের ছত্র”ছায়ায় দিনে দিনে বাড়ছে কিশোর গ্যাং। যদিও এর সাথে দ্বিমত পোষণ করেছেন রাজনীতিকরা।
এ ব্যাপারে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার(অপরাধ) টি.এম. মেশাররফ হোসেন জানান, কিশোর গ্যাং প্রতিরোধ করতে আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। তারা যদি ভূয়া সংবাদপত্রের পরিচয় দিয়ে অপরাধমূলক কার্যকলাপ করে তাদেরও আইনের আওতায় আনা হবে। অপরাধী যেই হোক কেউই ছাড় পাবেনা।
এসব ঘটনায় আতংকিত নগরবাসী। তারা চায় প্রশাসন আরও কঠোর হয়ে কিশোর গ্যাংয়ের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেক।