সিদ্ধিরগঞ্জ প্রতিনিধি: আট বছরের শিশু কন্যা এক মাদরাসা ছাত্রীকে হাত পা বেঁধে মুখে কস্টেপ লাগিয়ে ধর্ষণের পর হত্যার চেষ্টার অভিযোগে মাজারপুজারি এক মসজিদের ইমামসহ ৬ জনকে আটক করেছে র্যাব-১১। বুধবার দুপুরে সিদ্ধিরগঞ্জের আদমজীতে র্যাবের সদর দপ্তরে সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন ব্যাব-১১ এর অধিনায়ক লে: কর্ণেল কাজি শমসের উদ্দিন। তার আগে সকাল ৬ টায় ফতুল্লার উত্তর চাষাঢ়া চাঁনমারী এলাকা থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়। ভিকটেমের বাবাকে আগরবাতি ও মোমবাতি আনার কথা বলে বাহিরে পাঠিয়ে মসজিদের তৃতীয় তলায় ইমামের থাকার কক্ষে শিশুটিকে ধর্ষণ করা হয়।
ধৃতরা হলো, নেত্রকোনা জেলার কেন্দুয়া থানার সরাপাড়া এলাকার মৃত রিয়াজ উদ্দিনের ছেলে ফজলুর রহমান ওরফে রফিকুল ইসলাম(৪৫)। ফতুল্লা এলাকার রমজান আলী, গিয়াস উদ্দিন, হাবিব এ এলাহী, মোতাহার হোসেন ও শরিফ হোসেন। আলামত হিসেবে উদ্ধার করা হয়েছে হাত পা বাঁধা কাপড়, আগর ও মোমবাতি।
প্রধান অভিযুক্ত রফিকুল ইসলাম চাঁদমারী এলাকার একটি মাজারের খাদেম, একটি মাদরাসার প্রতিষ্ঠাতা ও একটি মসজিদের পেশ ইমাম। বাকি ৫ জনকে আটক করা হয়েছে ধর্ষনের ঘটনা ধামাচাপা ও ধর্ষিতাকে হাসপাতাল থেকে অপহরণ করে হত্যার চেষ্টা এবং তার পিতাকেও প্রাণ নাশের হুমকি প্রদানের অভিযোগে।
সংবাদ সমম্মেলনে র্যাব অধিনায়ক জানান, ধর্ষণের ঘটনাটি ঘটেছে গত শুক্রবার ভোরে। গত মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১০ টায় ভিকটিমের পিতা বোরকা পড়ে মহিলা সেজে র্যাব কার্যালয়ে এসে অভিযোগ জানায়, তার মেয়ে মসজিদের ইমাম কর্তৃক ধর্ষিত হয়ে অসুস্থ হওয়ায় নারায়ণগঞ্জ ভিক্টোরিয়া জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধিন। ধর্ষনের পর ইমাম ও তার অনুসারীরা মেয়ে ও আমাকে মেরে ফেলার জন্য বার বার হাসপাতালে গিয়ে খুঁজছে। ঘটনা জানার পর তাৎক্ষণিক র্যাবের একটি আভিযানিক দল হাসপাতালে গিয়ে ভিকটিমের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে ধর্ষক ওই ইমাম ও তার অনুসারীদের আটক করা হয়।
ধর্ষিতার পিতার বরাত দিয়ে র্যাব অধিনায়ক আরো জানান, শিশু কন্যাটি রাতে ঘুমের মাঝে বিভিন্ন দু:স্বপ্ন দেখে ভয়ে কান্না কাটি করতো। গত রমজান মাসে লোকমুখে জানতে পেরে ভিকটিমের বাবা মসজিদের ইমাম রফিকুল ইসলামের কাছে নিয়ে যায় ঝাড়ফুঁক ও পানিপড়ার জন্য। কয়েকবার নিয়ে যাওয়ার পর মেয়ের পরিবর্তন হয়নি। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার রাতে ভিকটিমের বাবা মোবাইল ফোনে ইমাম রফিকুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করলে তাকে ফজরের নামাজের পর মসজিদে নিয়ে যেতে বলে। কথা মতে পর দিন শুক্রবার ভোরে মেয়েকে নিয়ে মসজিদে যায় বাবা। তখন ইমাম বাবা মেয়েকে মসজিদের তৃতীয় তলায় তার থাকার কক্ষে নিয়ে যায়। পরে ভিকটিমের বাবাকে এক প্যাকেট আগরবাতি ও একটি মোমবাতি আনার জন্য বাহিরে পাটায়। ভিকটিমের বাবা চলে যাওয়ার পর ইমাম মসজিদের মোয়াজ্জেমকে ফোন করে গেইটে তালা লাগিয়ে দিতে বলে। ভিকটিমের বাবা ফিরে আসতে প্রায় ৪০ থেকে ৪৫ মিনিট সময় লাগে। এসময়ের মধ্যে ইমাম কাপড় দিয়ে শিশুটির হাত পা বেঁধে মুখে কস্টেপ লাগিয়ে নির্মম ভাবে পাশবিক নির্যাতন চালিয়ে তার কামনা লিপ্সা চরিতার্থ হাছিল করে। প্রমান মুছে ফেলার জন্য শিশুটিকে মসজিদের ছাদে নিয়ে পানি দিয়ে পরিস্কার করে দেয়। পরে শিশুর গলায় ছুরি ধরে এ কথা তার বাবাকে না বলার জন্য হুমকি দেয়। কিন্তু মেয়ের শারীরিক পরিবর্তন ও কান্নাকাটি দেখে বাবা চিন্তিত হয়ে কারণ জানতে চাইলেও তাৎক্ষনিক ভাবে শিশুটি কিছু বলেনি। বাড়ী যাওয়ার পর তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে বিষয়টি তার মা বুঝতে পারে। তখন ওই দিন বিকেলে মা বাবা মেয়েকে সাথে নিয়ে মসজিদ কমিটির কাছে বিচার দেয়। এসময় কমিটির কিছু লোক অভিযোগ মিথ্যা দাবি করে ভিকটিমের মা বাবাকে অপমান অপদস্থ করে। তখন এক মুসল্লীর পরাপর্শে মা বাবা মেয়েকে নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করে। তা জানতে পেরে ধর্ষক ইমামের অনুসারীরা ঘটনা আড়াল করতে হাসপাতালে গিয়ে ধর্ষিত শিশুকে অপহরণের চেষ্টা চালায় এবং বাবাকে মেরে ফেলার হুমকি দেয়। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে হাসপাতালের এক নার্স এর বোরকা পড়ে নারী সেজে ভিকটিমের বাবা রাতের আধারে র্যাব অফিসে এসে অভিযোগ জানায়। মেডিকেল পরীক্ষায় শিশুটি ধর্ষিত হওয়ার প্রমাণ পাওয়া গেছে বলে জানান র্যাব অধিনায়ক। ভিকটিম ও তার পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে ধৃতদের বিরুদ্ধে মামলা করার প্রস্তুতি চলছে বলেও জানান তিনি।