নারায়ণগঞ্জ ০৮:২৮ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
কাঁচপুর হাইওয়ে থানা পুলিশকে ম্যানেজ করে মহাসড়কে অপকর্ম চাঁদাবাজি সাংবাদিক শাওনের বাবা ফিরোজ আহমেদ আর নেই রিয়াদে জমকালো আয়োজনে মাই টিভির ১৫ তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উদযাপন রিয়াদে প্রিমিয়াম ফুটবল লীগের ফাইনাল অনুষ্ঠিত জুন মাসের ১৭ তারিখ কোরবানির ঈদ পালিত হওয়ার সম্ভবনা রিয়াদে নোভ আল আম্মার ইষ্টাবলিস্ট এর আয়োজনে দোয়া ও ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত রিয়াদে বেগম খালেদা জিয়ার রোগ মুক্তি কামনায় দোয়া ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত রিয়াদে জয়নাল আবেদীন ফারুক রিয়াদে বাংলাদেশ প্রবাসী সাংবাদিক ফোরামের ইফতার মাহফিলে প্রবাসীদের মিলন মেলা ফতুল্লা থানায় অভিযোগ করেও সাবেক সেনা পরিবার, পাশে পায়নি পুলিশ

রূপগঞ্জে ফসলি জমির মাটি প্রভাবশালীদের ইট ভাটায়

  • প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ০৭:০৯:৪৩ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১১ মার্চ ২০২১
  • ১০৬ বার পড়া হয়েছে

রূপগঞ্জ প্রতিনিধি :  নীতিমালার তোয়াক্কা না করেই রূপগঞ্জে ফসলি জমির মাটি যাচ্ছে উপজেলার বিভিন্ন ইটভাটায়। ফসলি জমির মাটি দিয়ে তৈরি করা ইটের চাহিদা বেশি থাকায় ভাটার মালিকরা বিভিন্ন কৌশলে তা নিয়ে যাচ্ছে। প্রশাসন নিরব ভুমিকা পালন করছে।
স্থানীয় প্রশাসন ও প্রভাবশালীদের জোগসাজসে উপজেলার বিরাবো, তারাইল, পাইস্কা, চারিতালুক, পূবেরগাঁও, ডহরগাঁও, হোরগাঁও, গোলাকান্দাইল, সাওঘাট, মাসাবো, কর্ণগোপ সহ আশপাশের এলাকার ফসলি জমির উপরের ভাগের (টপসোয়েল) মাটি অবাধে যাচ্ছে ইট ভাটায়। বিভিন্ন আবসন প্রকল্পেও যাচ্ছে ওই মাটি। তাতে জমি তার উর্বরতা হারাচ্ছে। ক্ষতির সম্মুখিন হচ্ছেন কৃষকরা। জমির টপসোয়েল কেটে ফেললে ২/৩ বছর ওই জমিতে তেমন ফসল উৎপাদন হয় না বলে জানিয়েছেন কৃষকরা।

জানা গেছে, নারায়ণগঞ্জ জেলার ৫ উপজেলার ৪২৪ বর্গমাইল আয়তনের মধ্যে ৩২৮ টি ইটভাটা রয়েছে। এর মধ্যে রূপগঞ্জেই ১১৪টি ইট ভাটার অবস্থান। ইট তৈরির প্রধান কাঁচামাল মাটি। ফসলি জমির মাটি ইট তৈরিতেও সুবিধা। চাহিদা বেশি। দামও অনেক।

রূপগঞ্জ উপজেলার উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, জমির উপরিভাগের মাটিতে যে পরিমাণ জিপসাম বা দস্তা থাকে ইট ভাটার কারণে তা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এছাড়া মাটিতে যে জীবানু থাকে এবং অনুজীবের কার্যাবলী আছে তা দিন দিন সীমিত হয়ে যাচ্ছে। এতে করে ফসলি জমির উৎপাদন ক্ষমতা হ্রাস। মাটির জৈব শক্তি কমে গিয়ে দীর্ঘ মেয়াদী ক্ষতির মুখে পড়ছে কৃষকরা।

উপজেলার তারাইল গ্রামের কৃষক আব্দুল আজিজ ও সোহেল মিয়া বলেন, ইটভাটার নিয়োজিত লোকজন জমির মাটি কিনে না কিনে কেটে নিয়ে ইটভাটায় সরবরাহ করছে। কোনো কোনো জমিতে ভেকু দিয়ে ১৪/১৫ ফুট গভীর করে মাটি কাটা হয়। তখন আশপাশের ফসলি জমির মাটি ভেঙ্গে সৃষ্ট গর্তে পড়ে। তাতেও ফসলি জমি ক্ষতির সম্মুখিন হয়

কাঞ্চন পৌরসভার বিরাবো এলাকার মেসার্স বিবিএফ ইট ভাটার মালিক নজরুল ইসলাম বলেন, বেলে মাটিতে ভালো মানের ইট তৈরি করা যায় না। বেলে মাটির সঙ্গে আংশিক ফসলি জমির উপরের অংশ মিশ্রিত করলে ইটের মান কিছুটা উন্নীত হয়। তাই ইট ভাটায় ফসলি জমির টপসোয়েলের গুরুত্ব অনেক বেশি।
দাউদপুর ইউনিয়নের খৈইসার এলাকার ইট ভাটার মালিক ফাহিম ইসলাম বলেন, প্রতি বছরই মাটি সরবরাহকারীরা আমাদের ইট ভাটায় মাটি দেন। কোথা থেকে মাটি দেন কিংবা কিভাবে মাটি আনা হয়, আমরা সেটা জানিনা। আমরা টাকা দেই। তারা মাটি দেয়। এর বাইরে কিছু বলতে পারবো না।

রূপগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিসার ফাতেহা নূর বলেন, এভাবে ফসলি জমির মাটি ইটভাটায় যেতে থাকলে আস্তে আস্তে ফসল উৎপাদন ব্যাহত হবে। কমপক্ষে ২/৩ বছর ওই জমি থেকে ভালো ফলন আশা করা যায় না। তাতে আগামীতে খাদ্য ঘাটতির সম্ভবনা রয়েছে।

রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহ্ নুসরাত জাহান বলেন, অবৈধ ইট ভাটায় অভিযান চালিয়ে জরিমানা আদায় করা হয়েছে। বেশ কয়েকটি ইট ভাটা গুঁড়িয়ে দেয়া হয়েছে।

নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোঃ মোস্তাইন বিল্লাহ বলেন, অভিযান চালিয়ে অনুমোদন বিহীন অবৈধ ইটভাটা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। অভিযান অব্যাহত আছে। পর্যায়ক্রমে অবৈধ ইটভাটাগুলো বন্ধ করে দেয়া হবে।

ট্যাগস :

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

জনপ্রিয় সংবাদ

কাঁচপুর হাইওয়ে থানা পুলিশকে ম্যানেজ করে মহাসড়কে অপকর্ম চাঁদাবাজি

রূপগঞ্জে ফসলি জমির মাটি প্রভাবশালীদের ইট ভাটায়

আপডেট সময় : ০৭:০৯:৪৩ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১১ মার্চ ২০২১

রূপগঞ্জ প্রতিনিধি :  নীতিমালার তোয়াক্কা না করেই রূপগঞ্জে ফসলি জমির মাটি যাচ্ছে উপজেলার বিভিন্ন ইটভাটায়। ফসলি জমির মাটি দিয়ে তৈরি করা ইটের চাহিদা বেশি থাকায় ভাটার মালিকরা বিভিন্ন কৌশলে তা নিয়ে যাচ্ছে। প্রশাসন নিরব ভুমিকা পালন করছে।
স্থানীয় প্রশাসন ও প্রভাবশালীদের জোগসাজসে উপজেলার বিরাবো, তারাইল, পাইস্কা, চারিতালুক, পূবেরগাঁও, ডহরগাঁও, হোরগাঁও, গোলাকান্দাইল, সাওঘাট, মাসাবো, কর্ণগোপ সহ আশপাশের এলাকার ফসলি জমির উপরের ভাগের (টপসোয়েল) মাটি অবাধে যাচ্ছে ইট ভাটায়। বিভিন্ন আবসন প্রকল্পেও যাচ্ছে ওই মাটি। তাতে জমি তার উর্বরতা হারাচ্ছে। ক্ষতির সম্মুখিন হচ্ছেন কৃষকরা। জমির টপসোয়েল কেটে ফেললে ২/৩ বছর ওই জমিতে তেমন ফসল উৎপাদন হয় না বলে জানিয়েছেন কৃষকরা।

জানা গেছে, নারায়ণগঞ্জ জেলার ৫ উপজেলার ৪২৪ বর্গমাইল আয়তনের মধ্যে ৩২৮ টি ইটভাটা রয়েছে। এর মধ্যে রূপগঞ্জেই ১১৪টি ইট ভাটার অবস্থান। ইট তৈরির প্রধান কাঁচামাল মাটি। ফসলি জমির মাটি ইট তৈরিতেও সুবিধা। চাহিদা বেশি। দামও অনেক।

রূপগঞ্জ উপজেলার উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, জমির উপরিভাগের মাটিতে যে পরিমাণ জিপসাম বা দস্তা থাকে ইট ভাটার কারণে তা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এছাড়া মাটিতে যে জীবানু থাকে এবং অনুজীবের কার্যাবলী আছে তা দিন দিন সীমিত হয়ে যাচ্ছে। এতে করে ফসলি জমির উৎপাদন ক্ষমতা হ্রাস। মাটির জৈব শক্তি কমে গিয়ে দীর্ঘ মেয়াদী ক্ষতির মুখে পড়ছে কৃষকরা।

উপজেলার তারাইল গ্রামের কৃষক আব্দুল আজিজ ও সোহেল মিয়া বলেন, ইটভাটার নিয়োজিত লোকজন জমির মাটি কিনে না কিনে কেটে নিয়ে ইটভাটায় সরবরাহ করছে। কোনো কোনো জমিতে ভেকু দিয়ে ১৪/১৫ ফুট গভীর করে মাটি কাটা হয়। তখন আশপাশের ফসলি জমির মাটি ভেঙ্গে সৃষ্ট গর্তে পড়ে। তাতেও ফসলি জমি ক্ষতির সম্মুখিন হয়

কাঞ্চন পৌরসভার বিরাবো এলাকার মেসার্স বিবিএফ ইট ভাটার মালিক নজরুল ইসলাম বলেন, বেলে মাটিতে ভালো মানের ইট তৈরি করা যায় না। বেলে মাটির সঙ্গে আংশিক ফসলি জমির উপরের অংশ মিশ্রিত করলে ইটের মান কিছুটা উন্নীত হয়। তাই ইট ভাটায় ফসলি জমির টপসোয়েলের গুরুত্ব অনেক বেশি।
দাউদপুর ইউনিয়নের খৈইসার এলাকার ইট ভাটার মালিক ফাহিম ইসলাম বলেন, প্রতি বছরই মাটি সরবরাহকারীরা আমাদের ইট ভাটায় মাটি দেন। কোথা থেকে মাটি দেন কিংবা কিভাবে মাটি আনা হয়, আমরা সেটা জানিনা। আমরা টাকা দেই। তারা মাটি দেয়। এর বাইরে কিছু বলতে পারবো না।

রূপগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিসার ফাতেহা নূর বলেন, এভাবে ফসলি জমির মাটি ইটভাটায় যেতে থাকলে আস্তে আস্তে ফসল উৎপাদন ব্যাহত হবে। কমপক্ষে ২/৩ বছর ওই জমি থেকে ভালো ফলন আশা করা যায় না। তাতে আগামীতে খাদ্য ঘাটতির সম্ভবনা রয়েছে।

রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহ্ নুসরাত জাহান বলেন, অবৈধ ইট ভাটায় অভিযান চালিয়ে জরিমানা আদায় করা হয়েছে। বেশ কয়েকটি ইট ভাটা গুঁড়িয়ে দেয়া হয়েছে।

নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোঃ মোস্তাইন বিল্লাহ বলেন, অভিযান চালিয়ে অনুমোদন বিহীন অবৈধ ইটভাটা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। অভিযান অব্যাহত আছে। পর্যায়ক্রমে অবৈধ ইটভাটাগুলো বন্ধ করে দেয়া হবে।