মো: আবদুল কাইয়ুম : নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ থানা এলাকায় বেসরকারি ক্লিনিক, ডায়াগনষ্টিক সেন্টার ও প্যাথলজিক্যাল ল্যাবরেটরী গুলোতে চলছে চিকিৎসার নামে প্রতারনা। বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালের নামি-দামি এমবিবিএস ডাক্তারদের নামের তালিকা দিয়ে সাইনবোর্ড লাগানো থাকলেও রোগী দেখছেন ভূয়া ডাক্তাররা। এসব ভূয়া ডাক্তারদের ভুল চিকিৎসায় রোগীদের জীবন বিপন্ন হচ্ছে। সরকারি অনুমোদন ছাড়াই চলছে বহু কিনিক ও ডায়গনষ্টিক সেন্টার। স্বাস্থ্যনীতি মালার তোয়াক্কা না করে গড়ে উঠা এসব চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যাবস্থা গ্রহন করতে র্যাব সক্রিয় ভূমিকা পালন করলেও একেবারই উদাসীন জেলা স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, চলতি মাসের ৮ তারিখ রাতে সিদ্ধিরগঞ্জ সানারপাড় রহিম মার্কেট এলাকায় অনুমোদনহীন হেলথ কেয়ার আধুনিক হাসপাতাল এন্ড ডায়গনষ্টিক সেন্টারে অভিযান চালিয়ে র্যাবের ভ্রাম্যমান আদালত ভূয়া ডাক্তার মো: তানভীর আহমেদ সরকারকে আটক করে ২ বছরের বিনাশ্রম কারাদন্ড প্রদান ও হাসপাতাল সিলগালা করে দিয়েছে। গত ২ এপ্রিল রাতে সাইনবোর্ড এলাকায় অনুমোদনহীন ফ্যামিলি ল্যাব হসপিটালে র্যাবের ভ্রাম্যমান আদালত অভিযান চালিয়ে ভূয়া ডাক্তার মো: নূরুল ইসলাম শেখকে গ্রেফতার করে ১ বছরের কারাদন্ড ও হসপিটাল সিলগালা করে। গত ৫ ফেব্রুয়ারি কদমতলী এলাকায় এম হোসেন জেনারেল হসপিটালে র্যাব অভিযান চালিয়ে ভূয়া ডাক্তার ফাহমিদা আলমকে আটক করে ভ্রাম্যমান আদালত বসিয়ে ৬ মাসের কারাদন্ড ও হসপিটাল সিলগালা করে দিয়েছে।
এর আগে গোদনাইল চৌধুরীবাড়ী এলাকায় জনস্বাস্থ্য জেনারেল হাসপাতালে অভিযান চালিয়ে র্যাবের ভ্রাম্যমান আদালত ভূয়া ডাক্তার মোবারক ইসলামকে গ্রেফতার করে ২ বছরের জেল ও হাসপাতাল সিলগালা করে। গোদনাইল এসও এলাকায় মেডি কেয়ার জেনারেল হাসপাতালে নারায়ণগঞ্জ জেলা নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট আসমাইল হোসনা লিজার আদালত অভিযান চালিয়ে প্রতিষ্ঠানটিকে জরিমানা না করলেও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও এমবিবিএস ডাক্তার এবং ডিপ্লোমাপ্রাপ্ত সেবীকা না থাকায় চিকিৎসা সেবা বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়ে রোগীদেরকে ভাল হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা গ্রহন করার পরামর্শ প্রদান করে আদালত।
এ ছাড়াও শিমরাইল মোড়ে সুগন্ধা হাসপাতালে ভুল চিকিৎসায় এক রোগীর মৃত্যু হলে স্বজনদের মোটা অংকের টাকা দিয়ে ধামাচাপা দেয় মালিক পক্ষ। মা হাসপাতাল এন্ড ল্যাবে ভুল চিকিৎসায় এক প্রসুতীর মৃত্যু হলে ক্ষিপ্ত স্বজনরা হাসপাতালে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাংচুর করে। ৪ জনকে আসামি করে থানায় মামলা করার পর পুলিশ ১ জনকে গ্রেফতার করে। তার পরও মা হাসপাতালের অপচিকিৎসা বন্ধ হয়নি। থানা এলাকার হাসপাতালগুলোতে প্রতিনিয়তই ঘটছে এসব ঘটনা। কিন্তু প্রতিটি কিনিক ও ডায়াগনষ্টিক সেন্টার মালিকরা স্থানীয় এক শ্রেণীর প্রভাবশালী ব্যক্তি ও সন্ত্রাসীদের ম্যানেজ করে রেখেছে। কোন রোগীর মৃত্যু বা জীবন শঙ্কটাপন্ন হলে ওই সব প্রভাবশালী ব্যক্তি ও সন্ত্রাসীরা ছুটে এসে রোগীর স্বজনদের হুমকি ধমকি দিয়ে বিভিন্ন মহলকে অর্থিক সুবিধা দিয়ে ঘটনা ধামাচাপা দেয়।
নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের তালিকা অনুযায়ী সিদ্ধিরগঞ্জ থানা এলাকায় নিবন্ধনকৃত ক্লিনিক, নার্সিং হোম ২৫ টি। অথচ বাস্তবে কিনিক,ডায়গনষ্টিক সেন্টার ও প্যাথলজিক্যাল ল্যাবরেটরীর সংখ্যা হবে কমপক্ষে দু,শতাধিক। যার অধিকাংশই অবৈধ। এসব চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানে রয়েছে নিজস্ব দালাল চক্র। বিভিন্ন গ্রাম্য পল্লী চিকিৎসক, ফার্মেসীর সার্টিফিকেটবিহীন হাতুড়ে ডাক্তাররাই দালাল হিসেবে নিয়জিত রয়েছে। তারাই রোগীদের পরামর্শ দিয়ে এসব কিনিকে পাঠায়। কোন হাসপাতালে নিয়মিত এমবিবিএস ডাক্তার ও ডিপোমাধারী নার্স নেই। ফলে চিকিৎসা করতে গিয়ে রোগীরা হচ্ছে প্রতারিত। ভুল চিকিৎসায় অনেক রোগীর মৃত্যু হয়েছে এমন অভিযোগও রয়েছে।
অভিযান চলার সময় র্যাবের সদর দপ্তরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলম জানান, সনদপ্রাপ্ত ডাক্তার না হয়েও নিজেকে ডাক্তার পরিচয় দিয়ে রোগী দেখার সময় হাতেনাতে গ্রেফতার করার পর, নিজের দোষ স্বীকার করায়, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন ২০০৯ এর ৫৩ ধারায় ভূয়া ডাক্তার তানভীর আহমেদ সরকারকে কারাদন্ড প্রদান করা হয়। অন্যরাও সাজা পেয়েছে একই আইনে।