নারায়ণগঞ্জ ০৬:৫৫ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২১ মার্চ ২০২৩, ৭ চৈত্র ১৪২৯ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজে নবীন বরণ ও পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠিত নিতাইগঞ্জে গুদামে বিষ্ফোরণে নিহত ১, আহত ১০ পাসপোর্ট দালাল চক্রের ১৪ জন গ্রেপ্তার আড়াইহাজারে দেশ রূপান্তর পত্রিকার প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত ১০ হাজার পিস ইয়াবা সহ এক মাদক ব্যবসায়ী গ্রেফতার চাঁদার দাবিতে হামলা সজুকে প্রধান করে  ১০ জনের বিরুদ্ধে মামলা ডিবি পরিচয়ে লুন্টিত ১৯ গরু উদ্ধার ৬ ডাকাত গ্রেপ্তার সাংবাদিক সম্মেলনের ১ বছর পর ছাদ থেকে পরে কাউন্সিলর বাদলের প্রথম স্ত্রীর মৃত্যু কাদিয়ানীদের সালানা জলাস বন্ধের দাবিতে মহসড়কে বিক্ষোভ আড়াইহাজারে সাংবাদিক ফরহাদ পাঠানের ভাইয়ের উপর সন্ত্রাসী হামলা

আজ ২৫শে ডিসেম্বর শুভ ‘বড়দিন’ (ক্রিসমাস)

  • নিকোলাস বিশ্বাস
  • আপডেট সময় : ০৯:৫১:৩৪ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২২
  • ৪৭ বার পড়া হয়েছে

আজ ২৫শে ডিসেম্বর শুভ বড়দিন। বড়দিন বা ক্রিসমাস একটি বাৎসরিক খ্রীষ্টীয় উৎসব। এটি খ্রীষ্টানদের জন্য সবচেয়ে বড় ধর্মীয় অনুষ্ঠান। প্রায় ২০২২ বছর আগে এই দিনে ত্রাণকর্তা প্রভু যীশু খ্রীষ্ট জেরুশালেম নগরীর বেথলেহমে মা মারীয়ার গর্ভে জন্মগ্রহন করেন। বিশ্বের প্রায় ২৫২ কোটি খ্রীষ্টান জনগোষ্ঠী আজ ধর্মীয় ভাব-গাম্ভীর্য সহকারে বড়দিন পালন করছে। পবিত্র বাইবেলে যীশুর জন্মের বিষয়ে এই কথা বর্ণিত আছে: “আর মা মারীয়া আপনার প্রথমজাত পুত্র প্রসব করিলেন, এবং তাঁহাকে কাপড়ে জড়াইয়া যাবপাত্রে শোয়াইয়া রাখিলেন, কারণ পান্থশালায় তাঁহাদের জন্য স্থান ছিল না” (লূক ২: ৭)।

বরিশাল ধর্মপ্রদেশের বিশপ ইম্মানুয়েল কানন রোজারিও’র পৌরহিত্যে ২৪ ডিসেম্বর রাত ১০টায় গোপালগঞ্জের বানিয়ারচর ধর্মপল্লীর গীর্জায় বড়দিনের ধর্মীয় কার্যক্রম শুরু হয়। এ অনুষ্ঠানে ধর্মপল্লীর খ্রীষ্টভক্তগণ অংশগ্রহণ করেন এবং রাত ১২টায় আনন্দ-উল্লাসে যীশুর জন্মদিন পালন করেন। এই একই ধর্মীয় অনুষ্ঠান পরের দিন সকালেও আয়োজন করা হয়। গীর্জার অনুষ্ঠানে বিশপ মহোদয়কে সহায়তা করেন বানিয়ারচর ধর্মপল্লীর পাল-পুরোহিত রেভাঃ ফাদার ডেভিড ঘরামী। বড়দিনে ক্যাথলিকদের প্রতিটি গীর্জায় পবিত্র ‘খ্রীষ্টযাগ’ উৎসর্গ ও খ্রীষ্টভক্তদের মাঝে ‘খ্রীষ্টপ্রসাদ’ বিতরণ ধর্মীয় অনুষ্ঠানের মূল পর্ব।

বিভিন্ন প্রয়োজনে এলাকার বাইরে যারা বসবাস করেন তারা বড়দিন উপলক্ষ্যে নিজ গ্রামের বাড়িতে ফিরে আসেন এবং স্বপরিবারে গীর্জায় অংশগ্রহণসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যোগদান করেন। ২৫ ডিসেম্বর বড়দিন উপলক্ষ্যে ধর্মপল্লীর খ্রীষ্টভক্তগণ সম্মিলিতভাবে দুপুর বেলায় চার্চ প্রঙ্গনে এক বিশেষ প্রীতিভোজে অংশগ্রহন করেন। বড়দিনের আনন্দকে বহুগুণে বাড়িয়ে দেয় রাতের ধর্মীয় কীর্তন যা দলে দলে পরিবেশন করা হয়।

এরপর বিকেল ৪টায় রেভাঃ ফাদার রিচার্ড বাবু হালদারের সঞ্চালনায় এবং ধর্মপল্লীর পাল-পুরোহিত রেভাঃ ফাদার ডেভিড ঘরামীর সভাপতিত্বে বড়দিনের শুভেচ্ছা বিনিময় সহ এক উন্মুক্ত আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয় যেখানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকেন বিশপ ইম্মানুয়েল কানন রোজারিও। এ সভায় এলাকার সর্বস্তরের খ্রীষ্টভক্তগণ অংশগ্রহন করেন এবং চার্চের উন্নতিকল্পে বিভিন্ন মতামত তুলে ধরেন।

ঢাকায় অবস্থিত ইস্পাহানী ইসলামিয়া চক্ষু ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের সহকারি পরিচালক নিকোলাস বিশ্বাস বলেনঃ বড়দিনের দুটি দিক রয়েছে; এর একটি হল আত্মিক এবং অন্যটি হল বাহ্যিক। উপহার প্রদান, সংগীত পরিবেশন, বড়দিনের শুভেচ্ছা-কার্ড বিনিময়, গীর্জার ধর্মোপাসনা, সম্মিলিত প্রীতিভোজ, ক্রিসমাস ট্রি, ঘর-বাড়ি পরিস্কার-পরিচ্ছন্নকরণ, উজ্জল তারকা উত্তোলন এবং যীশুর জন্মদৃশ্য ফুটিয়ে তোলার জন্য গোশালাঘর প্রস্তুতসহ এক বিশেষ ধরনের আলোকসজ্জার প্রদর্শনী বড়দিন উৎসব উদ্‌যাপনের অঙ্গ হয়ে উঠেছে। এছাড়া সুসজ্জিত সান্তাক্লজ কর্তৃক ছোটদের জন্য বড়দিনে উপহার আদান-প্রদান বেশ জনপ্রিয়। আমরা যারা যীশু খ্রীষ্টকে জগতের ত্রাণকর্তারূপে বিশ্বাস করি তাদের কাছে এদিনের তাৎপর্য অনেক। নতুন পোশাক, নানা খাবারের আয়োজন ও বিভিন্ন অনুষ্ঠানে আনন্দ-স্ফূর্তি করা এদিনের মূল তাৎপর্য নয়, বরং এর প্রকৃত তাৎপর্য পারমার্থিক বা আধ্যাত্মিক। এজন্য বড়দিনে গীর্জার উপাসনায় যোগ দেওয়া সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ।

৩৬৫ দিনের মধ্যে ২৫শে ডিসেম্বর দিনটি সময়ের ব্যাপ্তিতে বড় নয় কিন্তু মানবজাতির ত্রাণকর্তার জন্মদিন হিসেবে এর গুরুত্ব সর্বাধিক। আকাদেমি বিদ্যার্থী বাংলা অভিধানে যীশু খ্রীষ্টের জন্মোৎসবটিকে বাংলায় ‘বড়দিন‘ আখ্যা দেওয়ার কারণটির ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলা হয়েছেঃ ২৩ ডিসেম্বর থেকে দিন ক্রমশঃ বড়ো এবং রাত ছোটো হতে শুরু করে। বাংলায় ‘বড়দিন‘ নামকরণের ক্ষেত্রে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. বিশ্বজিৎ ঘোষ বলেন, “মর্যাদার দিক থেকে এটি একটি বড়দিন। যীশু যেহেতু এক বিশাল জনগোষ্ঠীর জন্য ধর্ম ও দর্শন দিয়ে গেছেন। সুতরাং যিনি এতো বড় ধর্ম ও দর্শন দিলেন ২৫শে ডিসেম্বর তাঁরই জন্মদিন। সে কারণে তাবৎ বিশ্বের খ্রীষ্টানগণ এটিকে বড়দিন হিসেবে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে।।

ট্যাগস :

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

জনপ্রিয় সংবাদ

টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজে নবীন বরণ ও পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠিত

আজ ২৫শে ডিসেম্বর শুভ ‘বড়দিন’ (ক্রিসমাস)

আপডেট সময় : ০৯:৫১:৩৪ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২২

আজ ২৫শে ডিসেম্বর শুভ বড়দিন। বড়দিন বা ক্রিসমাস একটি বাৎসরিক খ্রীষ্টীয় উৎসব। এটি খ্রীষ্টানদের জন্য সবচেয়ে বড় ধর্মীয় অনুষ্ঠান। প্রায় ২০২২ বছর আগে এই দিনে ত্রাণকর্তা প্রভু যীশু খ্রীষ্ট জেরুশালেম নগরীর বেথলেহমে মা মারীয়ার গর্ভে জন্মগ্রহন করেন। বিশ্বের প্রায় ২৫২ কোটি খ্রীষ্টান জনগোষ্ঠী আজ ধর্মীয় ভাব-গাম্ভীর্য সহকারে বড়দিন পালন করছে। পবিত্র বাইবেলে যীশুর জন্মের বিষয়ে এই কথা বর্ণিত আছে: “আর মা মারীয়া আপনার প্রথমজাত পুত্র প্রসব করিলেন, এবং তাঁহাকে কাপড়ে জড়াইয়া যাবপাত্রে শোয়াইয়া রাখিলেন, কারণ পান্থশালায় তাঁহাদের জন্য স্থান ছিল না” (লূক ২: ৭)।

বরিশাল ধর্মপ্রদেশের বিশপ ইম্মানুয়েল কানন রোজারিও’র পৌরহিত্যে ২৪ ডিসেম্বর রাত ১০টায় গোপালগঞ্জের বানিয়ারচর ধর্মপল্লীর গীর্জায় বড়দিনের ধর্মীয় কার্যক্রম শুরু হয়। এ অনুষ্ঠানে ধর্মপল্লীর খ্রীষ্টভক্তগণ অংশগ্রহণ করেন এবং রাত ১২টায় আনন্দ-উল্লাসে যীশুর জন্মদিন পালন করেন। এই একই ধর্মীয় অনুষ্ঠান পরের দিন সকালেও আয়োজন করা হয়। গীর্জার অনুষ্ঠানে বিশপ মহোদয়কে সহায়তা করেন বানিয়ারচর ধর্মপল্লীর পাল-পুরোহিত রেভাঃ ফাদার ডেভিড ঘরামী। বড়দিনে ক্যাথলিকদের প্রতিটি গীর্জায় পবিত্র ‘খ্রীষ্টযাগ’ উৎসর্গ ও খ্রীষ্টভক্তদের মাঝে ‘খ্রীষ্টপ্রসাদ’ বিতরণ ধর্মীয় অনুষ্ঠানের মূল পর্ব।

বিভিন্ন প্রয়োজনে এলাকার বাইরে যারা বসবাস করেন তারা বড়দিন উপলক্ষ্যে নিজ গ্রামের বাড়িতে ফিরে আসেন এবং স্বপরিবারে গীর্জায় অংশগ্রহণসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যোগদান করেন। ২৫ ডিসেম্বর বড়দিন উপলক্ষ্যে ধর্মপল্লীর খ্রীষ্টভক্তগণ সম্মিলিতভাবে দুপুর বেলায় চার্চ প্রঙ্গনে এক বিশেষ প্রীতিভোজে অংশগ্রহন করেন। বড়দিনের আনন্দকে বহুগুণে বাড়িয়ে দেয় রাতের ধর্মীয় কীর্তন যা দলে দলে পরিবেশন করা হয়।

এরপর বিকেল ৪টায় রেভাঃ ফাদার রিচার্ড বাবু হালদারের সঞ্চালনায় এবং ধর্মপল্লীর পাল-পুরোহিত রেভাঃ ফাদার ডেভিড ঘরামীর সভাপতিত্বে বড়দিনের শুভেচ্ছা বিনিময় সহ এক উন্মুক্ত আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয় যেখানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকেন বিশপ ইম্মানুয়েল কানন রোজারিও। এ সভায় এলাকার সর্বস্তরের খ্রীষ্টভক্তগণ অংশগ্রহন করেন এবং চার্চের উন্নতিকল্পে বিভিন্ন মতামত তুলে ধরেন।

ঢাকায় অবস্থিত ইস্পাহানী ইসলামিয়া চক্ষু ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের সহকারি পরিচালক নিকোলাস বিশ্বাস বলেনঃ বড়দিনের দুটি দিক রয়েছে; এর একটি হল আত্মিক এবং অন্যটি হল বাহ্যিক। উপহার প্রদান, সংগীত পরিবেশন, বড়দিনের শুভেচ্ছা-কার্ড বিনিময়, গীর্জার ধর্মোপাসনা, সম্মিলিত প্রীতিভোজ, ক্রিসমাস ট্রি, ঘর-বাড়ি পরিস্কার-পরিচ্ছন্নকরণ, উজ্জল তারকা উত্তোলন এবং যীশুর জন্মদৃশ্য ফুটিয়ে তোলার জন্য গোশালাঘর প্রস্তুতসহ এক বিশেষ ধরনের আলোকসজ্জার প্রদর্শনী বড়দিন উৎসব উদ্‌যাপনের অঙ্গ হয়ে উঠেছে। এছাড়া সুসজ্জিত সান্তাক্লজ কর্তৃক ছোটদের জন্য বড়দিনে উপহার আদান-প্রদান বেশ জনপ্রিয়। আমরা যারা যীশু খ্রীষ্টকে জগতের ত্রাণকর্তারূপে বিশ্বাস করি তাদের কাছে এদিনের তাৎপর্য অনেক। নতুন পোশাক, নানা খাবারের আয়োজন ও বিভিন্ন অনুষ্ঠানে আনন্দ-স্ফূর্তি করা এদিনের মূল তাৎপর্য নয়, বরং এর প্রকৃত তাৎপর্য পারমার্থিক বা আধ্যাত্মিক। এজন্য বড়দিনে গীর্জার উপাসনায় যোগ দেওয়া সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ।

৩৬৫ দিনের মধ্যে ২৫শে ডিসেম্বর দিনটি সময়ের ব্যাপ্তিতে বড় নয় কিন্তু মানবজাতির ত্রাণকর্তার জন্মদিন হিসেবে এর গুরুত্ব সর্বাধিক। আকাদেমি বিদ্যার্থী বাংলা অভিধানে যীশু খ্রীষ্টের জন্মোৎসবটিকে বাংলায় ‘বড়দিন‘ আখ্যা দেওয়ার কারণটির ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলা হয়েছেঃ ২৩ ডিসেম্বর থেকে দিন ক্রমশঃ বড়ো এবং রাত ছোটো হতে শুরু করে। বাংলায় ‘বড়দিন‘ নামকরণের ক্ষেত্রে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. বিশ্বজিৎ ঘোষ বলেন, “মর্যাদার দিক থেকে এটি একটি বড়দিন। যীশু যেহেতু এক বিশাল জনগোষ্ঠীর জন্য ধর্ম ও দর্শন দিয়ে গেছেন। সুতরাং যিনি এতো বড় ধর্ম ও দর্শন দিলেন ২৫শে ডিসেম্বর তাঁরই জন্মদিন। সে কারণে তাবৎ বিশ্বের খ্রীষ্টানগণ এটিকে বড়দিন হিসেবে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে।।