সিদ্ধিরগঞ্জ প্রতিনিধি : সিদ্ধিরগঞ্জের শিমরাইলে পাকিস্তান আমলে গড়ে উঠা বন্ধকৃত তাজ জুট মিলের কোটি কোটি টাকা মূল্যের মেশিনপত্র লুটপাট করার পাঁয়তারা চলছে। মহামান্য হাইকোর্টে মামলা চলমান থাকা সত্তেও বিজেএমসির কথিপয় কর্মকর্তাদের সাথে আতাঁত করে স্থানীয় নামধারী কয়েকজন শ্রমিক নেতা মিলের মালামাল লুটপাট করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। বিজেএমসির এক কর্মকর্তার উপস্থিতিতে নামধারী শ্রমিক নেতা আবদুল খালেক,মাইন উদ্দিন, আবদুল বাতেন ও হাফিজ উদ্দিন শনিবার (২ জুন) সকাল ১০ টায় সরকারি ছুটির দিনে গোপনে মিলের ভিতর প্রবেশ করে কোটি টাকা মূল্যের মেশিন নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। ম্যাজিস্ট্রেট এর উপস্থিতিতে লাগানো তালা খোলে তারা ভিতরে প্রবেশ করে দু,টি মেশিন খোলে ফেলা হয়েছে বলে মিল মালিক পক্ষের অভিযোগ।
জানা গেছে, সিদ্ধিরগঞ্জের শিমরাইল এলাকায় ১১ একর জমির উপড় গড়ে উঠা তাজ জুট বেকিং কোং লিমিটেড মিলটি কমপক্ষে ৩০ বছর আগে বন্ধ হয়ে পড়ে। আনুমানিক আড়াইশ কোটি টাকা মূল্যের এই মিলের যাবতীয় শেয়ার, স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি ও স্বত্ব গত ২৬ জানুয়ারি দখলে নেয় সরকার। মহামান্য রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে কন্ট্রাক এক্ট ১৮৭২ আইনের ৩৯ নং ধারা অনুযায়ী বিগত ১৯৮৫ সালের ২৭ মে সম্পাদিত চুক্তি বাতিল করে ২৫ জানুয়ারি বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব রীনা পারভীন স্বাক্ষরীত এক প্রজ্ঞাপনের প্রেক্ষিতে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রিফাত ফেরদৌস এর উপস্থিতিতে মিলটির দখল বুঝে নেয় বিজেএমসি কর্তৃপক্ষ। বস্ত্র ও পাট মন্ত্রনালয় বেসরকারিকরণ ও বিরাষ্ট্রীয়করণ শাখা বাংলাদেশ সচিবালয় ঢাকা নং-২৪.০০.০০০০.২০২.১৮.০০৯.১২(২য় খন্ড).২৮ জারিকৃত প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়েছে, বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল এন্ট্রারপ্রাইজ (ন্যাশনালিজেশন)অরডার,১৯৭২(পি.ও.নং-২৭ অফ ১৯৭২)মূলে তাজ জুট বেকিং কোং লিমিটেড এর সকল শেয়ার ও অন্যান্য স্বত্ব সরকারের ন্যস্ত ছিল। তার পর ২৭-০৫-১৯৮৫ ইং তারিখে শিল্পনীতির শর্তসমূহ প্রতিপালন করে সরকার উক্ত কোম্পানির সাথে সম্পাদিত দ্বিপাক্ষিক চুক্তি এবং সরকার,বিজেএমসি ও মিল কর্তৃপক্ষের সাথে সম্পাদিত ত্রিপাক্ষিক চুক্তিমূলে মিল গ্রহীতাগণ মিলের বিপরীতে সরকার ও সরকারি অর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহের দায়-দেনা পরিশোধ করার জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়ে মিলের ব্যবস্থপনার দায়িত্ব গ্রহন করেন। কিন্তু ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ চুক্তি মতে মিল কর্তৃপক্ষ সরকার, বিজেএমসি ও অন্যান্য সরকারি আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহের পাওনা পরিশোধ করেনি। চুক্তি মতে পাওনা পরিশোধ করার জন্য মিলের ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষকে গত ২ হাজার ১০ সাল থেকে সর্বশেষ ২ হাজার ১৬ সাল পর্যন্ত অসংখ্য তাগিদপত্র প্রদান করা স্বত্বেও সরকারি পাওনা পরিশোধ না করে মিল কর্তৃপক্ষ সরকারের পূর্বানুমোদন ব্যতিরেকে উত্তরা ব্যাংক লিমিটেড হতে ঋণ গ্রহন করেছে। যেহেতু মিল কর্তৃপক্ষ সরকার, বিজেএমসি ও সরকারের আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহের পাওনা পরিশোধ না করা, উত্তরা ব্যাংক থেকে ঋণ গ্রহন করা, মিল বন্ধ রাখায় সরকারের সাথে সম্পাদিত চুক্তিদ্বয়ের শর্ত ভঙ্গ করে, হাজার-হাজার শ্রমিক-কর্মচারীকে তাদের কর্মসংস্থান হতে বঞ্চিত করে রেখেছে, এতে মিল হস্তান্তরের উদ্দেশ্য ব্যাহত এবং চুক্তি লংঘিত হয়েছে। সেহেতু জনস্বার্থে মহামান্য রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে কন্ট্রাক এক্ট ১৮৭২ আইনের ৩৯ নং ধারা অনুযায়ী বিগত ১৯৮৫ সালের ২৭ মে সম্পাদিত মিল হস্তান্তর চুক্তিদ্বয় বাতিল করা হলো। নারায়ণগঞ্জ জেলার সিদ্ধিরগঞ্জ শিমরাইলে অবস্থিত তাজ জুট বেকিং কোং লিমিটেড কারখানাটিসহ উক্ত কোম্পানির যাবতীয় শেয়ার, স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি ও স্বত্ব ২৫ জানুয়ারি ২ হাজার ১৮ ইং সাল থেকে সরকার কর্তৃক টেক বেক করা হলো এবং পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত মিলটির ব্যবস্থাপনার নিমিত্ত এ মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন রাষ্টায়ত্ব সংস্থা বিজেএমসি’র নিয়ন্ত্রণে ন্যস্ত করা হলো।
অভিযোগ জানা গেছে, ২৫ জানুয়ারি প্রজ্ঞাপন জারি করার পর মিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শেখ হেদায়েত উল্লাহকে কোন নোটিশ না দিয়েই সরকারি ছুটির দিন ২৬ জানুয়ারি শুক্রবার সকালে রিফাত ফেরদৌস নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নারায়ণগঞ্জ এর উপস্থিতিতে, সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ওসি(তদন্ত) নজরুল ইসলামের নেতৃত্বে বিপুল সংখ্যক পুলিশের সহায়তায় বিজেএমসির কর্মকর্তারা তাজ জুট মিলের দখল নিয়ে নেয়। এসময় মিলের ব্যবস্থপনা পরিচালক শেখ হেদায়েত উল্লাহ বা তার পক্ষের কোন প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন না। বিনা নোটিশে মিল দখল করে নেওয়ার পর ব্যবস্থাপনা পরিচালক শেখ হেদায়েত উল্লাহ মহামান্য হাইকোর্টের স্বরনাপন্ন হোন। শুনানি শেষে হাইকোর্ট মিলের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেন।
মিলের ভিতরে একটি কক্ষ দখল করে ব্যক্তিগত অফিস বানিয়ে রাখা সিদ্ধিরগঞ্জ উইনিয়ন যুবলীগ নেতা মোঃ নজরুল ইসলামের সাথে কথা হলে তিনি জানান, মেশিন নিয়ে যাওয়ার খবর পেয়ে আমিও গিয়ে ছিলাম। বিজেএমসির কর্মকর্তা শহীদুল্লাহকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি জানিয়েছেন সরকারি আদেশ মোতাবেক কাজ করা হচ্ছে। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তারই এক ঘনিষ্টজন জানান, মেশিন সরিয়ে নেওয়ার সাথে ওই নজরুল ইসলামও জড়িত।
মালিক পক্ষের মহিউদ্দিন জানান, মিলের মেশিনপত্র চুরি করে নিয়ে যাওয়ার খবর পেয়ে গিয়ে দেখি কোটি টাকা দামের দু,টি মেশিন খোলে ফেলা হয়েছে। তখন বিজেএমসির কর্মকর্তা শহিদুল্লাহ কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি জানান, এসব মেশিন করিম জুট মিলে নিয়ে যাওয়া হবে। মামলা নিস্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত মেশিন কেন নিচ্ছেন প্রশ্ন করলে শহীদুল্লাহ আমার সাথে উত্তেজিত হয়ে উঠে। খবর পেয়ে এলাকার লোকজন ছুটে এসে মোবাইল ফোনে ছটি উঠাতে থাকলে বেলা ৩ টার দিকে সবাই মিলের ভিতর থেকে বের হয়ে যায়। তাদের সাথে করে আনা ট্রাকটি খালি ফিরিয়ে দেওয়া হয়। তবে যে কোন সময় সুযোগ মতে খোলে রাখা মেশিন নিয়ে যাবে বলে ধারনা করছেন মহিউদ্দিন।
এ বিষয়ে বিজেএমসির কর্মকর্তা শহীদুল্লাহর সাথে কথা হলে তিনি জানান, হাইকোর্ট যে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল তা বাতিল করা হয়েছে। তাই মিলের মালামাল সরিয়ে নিতে আইনী কোন বাঁধা নেই। তাজ জুট মিলের মেশিন খোলে করিম জুট মিলে নিয়ে যাওয়ার জন্য সরকারি আদেশ রয়েছে। আমি সরকারি আদেশ বলেই মেশিন খোলেছি। তবে তিনি সরকারি আদেশ নামা দেখাতে পারেননি। আসার সময় আদেশ নামাটি আনতে বুলে গেছেন বলে তিনি জানান। সরকারি আদেশ হলে মিলের বাহির দিয়ে তালা লাগিয়ে গোপনে ভিতরে কাজ করা হচ্ছে কেন জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান। মেশিন না নিয়েই ট্রাকটি খালি চলে গেছে কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন,এই ট্রাকটি অনেক ছোট। তাই মেশিনটি নিতে হলে আরো বড় ট্রাক লাগবে।
মিলে নিয়োজিত বিজেএমসির সিকিউরিটি ইনচার্জ জানায়, সকালে শহিদুল্লাহ স্যার এসে মিলের তালা খোলে দিতে বলে। মেশিন সরিয়ে নেওয়ার কথাও তিনি বলেন। তবে সরকারি বা বিজেএমসির অফিসিয়াল কাগজপত্র ছাড়া আমি কোন মালামাল কাউকে নিয়ে যেতে দিবনা।
সংবাদ শিরোনাম ::
সিদ্ধিরগঞ্জে তাজ জুট মিলের মেশিনারি লুটপাটের পাঁয়তারা
- প্রতিনিধির নাম
- আপডেট সময় : ১২:৫৪:৩৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ২ জুন ২০১৮
- ৩৫৮ বার পড়া হয়েছে
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ