সিদ্ধিরগঞ্জে আদমজী কদমতলী এলাকায় ফুটপাত থেকে চাঁদা আদায়ের প্রতিবাদ করায় বিএনপি ও ছাত্রদলের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও ৭ নং ওয়ার্ড বিএনপির অফিসে হামলার ঘটনা সিদ্ধিরগঞ্জে ব্যাপক আলোচনা সমালোচনা ও চাঞ্চ্যল্যের সৃষ্টি করেছে।
এদিকে এ ঘটনায় ৭নং ওয়ার্ড বিএনপি নেতা শামিম আহমেদ মহানগর ছাত্রদল সভাপতি সাগরের বিরুদ্ধে নারায়ণগঞ্জ শহরে কতিপয় লোক নিয়ে মানববন্ধন করায় বিষয়টি নিয়ে বিএনপি ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের মধ্যে প্রচন্ড ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। তারা বলছেন নিজের দোষ এড়াতে এ মানববন্ধন করে শামিম ঢালি।
অপরদিকে শহরে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনের ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে এ নিয়ে স্থানীয় সাধারণ মানুষদের মধ্যেও এনিয়ে ব্যাপক সমালোচনা করতে দেখা যায়।
অনেককেই বলতে দেখা যায় আওয়ামী লীগের পুরোনো চাঁদাবাজদের নিয়ে ছক কেটে শামীম ঢালির চাঁদা আদায় করার বিষয়টি প্রকাশ্যে এসে পড়া ও এটি বন্ধ করতে ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা বললে তাদের বিতর্কিত করে বিশেষ মিশনে নামেন তিনি।
এরই ধারাবাহিকতায় নিজেরাই নিজেদের লোকজন দিয়ে অফিস ভাংচুরের নাটক করে নেতৃবৃন্দের ছবি মাটিতে ছড়িয়ে ছিটে সাগর ও তার লোকজনের নাম দেয়। যাতে এ চাঁদাবাজি তারা নির্বিঘ্নে চালিয়ে যেতে পারে।
যদি তারা নির্দোষ হতো নিজ এলাকায় থেকেই এর প্রতিবাদ করতো অথবা শীর্ষ নেতাদের হস্তক্ষেপ করতো। তা না করে নিজেদের অপরাধ আড়াল করতে শহরে মানববন্ধন করেছে।
্অপরদিকে শহরে মানববন্ধনের খবর ছড়িয়ে পড়লে ৭নং ওয়ার্ডের সর্বস্তরের জনগনের উদ্যোগে সিদ্ধিরগঞ্জে আদমজী-চাষাঢ়া সড়কে আরেকটি পাল্টা মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। মানববন্ধনে চাঁদাবাজী, দখলবাজী ও সরকারী খাল দখলের প্রতিবাদ করায় ছাত্রদলের কর্মীদের উপর হামলার ঘটনায় দোষীদের বিচারের দাবি করা হয়।
স্থানীয়রা চাঁদাবাজী, দখলবাজী ও সরকারী খাল দখলের বিষয়টি নিয়ে বিএনপি ও ছাত্রদলের শীর্ষ নেতৃবৃন্দের হস্তক্ষেপ কামনা করেন। নচেৎ এ বিষষটি নিয়ে দলের ভাবমূর্তি নষ্ট হবে। এছাড়াও ভবিষ্যতে বড় ধরণের যেকোনা নাশকতার ঘটনা ঘটতে পারে।
এদিকে শহরে অনুষ্ঠিত মানবন্ধনে ৭ নং ওয়ার্ড বিএনপি নেতা শামীম ঢালী বলেন, গত ৫ আগস্টের পর থেকে সিদ্ধিরগঞ্জের ৭নং ওয়ার্ডের প্রতিটি পাড়া মহল্লায় সন্ত্রাস মাদক ও চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে মিছিল মিটিং করেছি। যাতে করে আমাদের এলাকায় কোন চাঁদাবাজি না হয়। কিন্তু আমাদের ৭ নং ওয়ার্ডের কাশেমের ছেলে মহানগর ছাত্রদলের সভাপতি সাগর সে এমন কোন জায়গা নাই যেখানে চাঁদাবাজি করে নাই। সে কদমতলী এলাকার প্রতিটি দোকান থেকে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা করে প্রতিদিন চাঁদা উঠায়। পানি উন্নয়ন বোর্ডের সামনের দোকান থেকে এসে চাঁদা দাবি করে। সে ময়লা গাড়ি গুলোকে আটকেও চাঁদা দাবি করছে। চাঁদা পাওয়ার পর সেই গাড়িগুলোকে কাজ করতে দিয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ইপিজেডের বেশিরভাগ গার্মেন্টসে গিয়ে সাগর হুমকি ধামকি দিয়ে জুট বাইর কইরা নিয়ে আসতেছে। ব্যবসায়ীদেরকে জিম্মি করে যারা ব্যবসা করে তাদের থেকে মোটা অংকের চাঁদা দাবি করছে। অবৈধভাবে গ্যাস সংযোগের মাধ্যমে সে পিপুল চাঁদাবাজি করছে।
অপরদিকে, সিদ্ধিরগঞ্জে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে নাসিক ৭ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জামান মির্জা তার বক্তব্যে বলেন, শামীম ঢালী বিএনপি নেতা হয়েও আওয়ামী সন্ত্রাসী বাহিনীর কিছু নেতা-কর্মী নিয়ে সরকারী ডিএনডি খাল দখল, ফুটপাত এবং ময়লার গাড়ীর থেকে চাঁদাবাজী করে আসছে। আমরা তার প্রতিবাদ করায় আমাদের ছাত্রলদের কর্মীদের উপর হামলা চালিয়ে মারধর করে, তার প্রতিবাদে আমরা আজকে রাজপথে দাড়িয়ে শামীম ঢালীসহ তার সাঙ্গ-পাঙ্গদের বিচারের দাবী করছি।
এই মানববন্ধনের মাধ্যমে আমরা শামীম ঢালীকে বলতে চাই, আপনি আওয়ামীলীগের সন্ত্রাসী বাহিনীদেরকে বাদ দিয়ে দেশনেত্রি বেগম খালেদা জিয়া এবং তারেক রহমানের আদর্শ যদি ধারণ করতে পারেন তাহলে আপনি চাঁদাবাজী, দখলবাজী বাদ দিয়ে আমাদের সাথে বিএনপির রাজনীতি করুন। নাহলে আপনার সিদ্ধিরগঞ্জে কোন ঠাই হবে না। এসময় তিনি ফুটপাত ব্যবসায়ীদের উদ্দেশ্য করে বলেন, আপনারা কাউকে চাঁদা দিবেন না । কেউ দখল চাঁদাবাজি ও চাঁদাবাজী করে দলের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করবে আমরা ছাত্র-জনতা কঠোরভাবে তা প্রতিহত করবো।
একই ওয়ার্ড বিএনপির সহ-সভাপতি খোরশেদ বলেন, আওয়ামী লীগ আমলে আমরা অনেক কষ্ঠ করেছি। যেহেতু এখন সংস্কার চলছে তাই আমরা চাই সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ ও মাদক মুক্ত দেশ হোক। কিন্তু আমাদের বিএনপির কিছু লোক আওয়ামী লীগের লোকদের সাথে নিয়ে আবার নতুন করে চাঁদাবাজি করছে। ফলে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের ফসল আমরা ঘরে নিতে পারবনা। তাই আমরা এলাকার লোকজন মিলে চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছি।
স্থানীয় ফুটপাত ব্যবসায়ী শাহ আলম বলেন, শামীম ঢালীর নেতৃতে আমাদের এলাকার সরকারী জায়গা দখল করে নিয়েছে। প্রতিটি দোকান থেকে ২০০/৩০০ টাকা করে চাঁদা উঠায়। কদমতলী ১০ তলা ভবনের সামনে পানি উন্নয়ন বোর্ডের সরকারী জায়গায় প্রায় ২৫ টি দোকান থেকে চাঁদা তোলে শামীম ঢালীর লোক জন। তিনি আরও বলেন, আওয়ামী স্বৈরাচার সরকার থাকাকালীন সময় ওয়ার্ড কাউন্সিলর মিজানুর রহমান খাঁন রিপনের নেতৃতে এইসব দোকান-পাট নির্মাণ করা হয়।
তার মাস্টার মাইন্ড মাদক কারবারী মটর সাইকেল মিস্ত্রি হাসান বাবুর নেতৃতে এই দোকান গুলো থেকে চাঁদা তুলতেন কাউন্সিলর রিপন। গত ৫ই আগষ্ট বৈষ্যম বিরোধী ছাত্র-জনতার আনন্দোলনে আওয়ামী ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা সরকার পতন হওয়ার পর আওয়ামীলীগের সন্ত্রাসীরা গাঁ ঢাকা দেয়ায় গডফাদার শামীম ওসমানের আস্থাভাজন কাউন্সিলর রিপনের অবৈধ আয়ের সাম্রাজ্য দখল করে নেয় শামীম ঢালী। আমরা তার বিচারের দাবী জানাই। আমরা চাই এই সিদ্ধিরগঞ্জ থেকে যেন চাঁদাবাজী ও দখলদারিত্ব মুক্ত হয়।
ফলবিক্রেতা রমজান বলেন, দৈনিক ২০০ টাকা করে চাঁদা দিতে হচ্ছে শামীম ঢালিকে। তাকে চাঁদা না দিলে দোকানদারি করতে দিবেনা বলে হুমকি দেয়।