স্টাফ করেসপন্ডেন্ট :
ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র আতিকুল ইসলাম ও ভূমি মন্ত্রণালয় বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ ও ছয় দফা দাবি আদায় নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছেন শহীদ মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল কাদেরের দ্বিতীয় প্রজন্ম।
মেয়রের বিরুদ্ধে এ সংবাদ সম্মেলন করেন মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের দ্বিতীয় প্রজন্ম নুরতাজ আরা ঐশী।
আজ ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সংবাদ সম্মেলনে ভাষানটেক পূর্ণবাসন প্রকল্পের বস্তিবাসী ও উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে ঐশী লিখিত বক্তব্যে অভিযোগ করে বলেন, মেয়র আতিকুল ইসলাম তাদের পিতার পৈত্রিক সম্পত্তি ও বস্তির গরিব মানুষের প্রকল্প জোরজবস্তি করে দখল করে নিয়েছে। তার অভিযোগ শুধু পিতার সম্পত্তি নয় তার মায়ের পারিবারিক ভাবে পাওয়া ২ টি ফ্ল্যাট স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের দিয়ে দখল করে নিয়েছে এবং তাদের আয়-রোজগারের সমস্ত পথ বন্ধ করে দিয়েছে মেয়র আতিক। তার অভিযোগ, পুলিশ ও সন্ত্রাসী দিয়ে তাদেরকে হেই প্রতিপন্ন করা হচ্ছে।
সংবাদ সম্মেলনে নুরতাজ আরো ঐশী আরো বলেন, মহামান্য আদালত আমাদের পৈত্রিক সম্পত্তির বিষয়ে আমাদের পক্ষে রায় দিয়েছে এবং ঢাকা জেলা প্রশাসন ও ডিএনসিসির সাবেক মেয়র আনিসুল হক আমাদের এ সমস্যা সমাধানের জন্য চেষ্টা করেছিল কিন্তু মেয়র আতিক আসার পর তিনি সে সমস্যাটি জোরালো ভাবে জটিলতায় পরিণত করেছে। আইন ও ঢাকা জেলা প্রশাসনের কথা মানছেনা মেয়র আতিক। আমাদের বিষয় নিয়ে তিনি নিজ ক্ষমতাবলে জটিলতা সৃষ্টি করছে।
ওশী জানান, আমাদের ভাষানটেক পুনর্বাসন প্রকল্প আমাদের কোটি কোটি টাকা আটকে রয়েছে যা ভূমি মন্ত্রণালয় ও সন্ত্রাসী চক্র আজ পর্যন্ত লুটেপুটে খাচ্ছে। আর এদিকে ডিএনসিসি মেয়র আতিকুল ইসলাম আমাদের সাথে বছরের-পর-বছর অবিচার করছেন। তিনি বলেন, কোর্টের আদেশ অমান্য করছেন এবং সংবিধান লঙ্ঘন করে শর্ত ভঙ্গ করেছে মেয়র আতিক এবং ডিএনসিসিকে দুর্নীততে আক্রান্ত করছে।
সংবাদ সম্মেলনে ঐশী আর অভিযোগ করে বলেন, লালমাটিয়ার দুটি ফ্ল্যাট আর সাভার কলমা এই বাগানবাড়ি থেকে আমাদের ইনকাম হতো কিছু যা দিয়ে আমরা পারিবারিক খরচ চলতাম। আর সেই ইনকামটা বন্ধ করে দিয়েছে মেয়র আতিক। এখন আমরা মানবিক ভাবে জীবন যাপন করছি। আমাদের লেখাপড়া বন্ধের পথে। তিনি বলেন, এদিকে কোটি কোটি টাকা ভাষানটেক প্রকল্পে ব্লক হয়ে আছে। তার পাশাপাশি গত পঞ্চাশ বৎসরের কলমিলতা বাজারে ক্ষতিপূরণ আইনী লড়াইয়ে ও অন্যান্য অফিশিয়াল স্টেপ নিতে গিয়ে আরও যা সম্পত্তির ছিল তাও আমরা হারিয়েছি। আমরা সর্বোচ্চ আদালত পর্যন্ত গিয়ে জাস্টিস পেয়েছি ঠিকই, কিন্তু সেই রায় যারা বাস্তবায়ন করবেন তারা সেটাকে সম্পূর্ণ অবৈধ ভাবে আটকে রেখেছে।
তিনি বলেন, স্বাধীনতার সংগ্রামের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে একটি শহীদ মুক্তিযোদ্ধা পরিবার হিসেবে আমাদের অনেক গর্ববোধ করার কথা কিন্তু স্বাধীনতার এই ৫০ বছর পূর্তি অনুষ্ঠান আজ আমাদের কে কাঁদাচ্ছে এবং কষ্ট দিচ্ছে। একজন মুক্তিযোদ্ধা পরিবার হিসেবে এ কষ্ট মেনে নেওয়া কঠিন।
এ সময় ঐশী মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও নীতিনির্ধারকদের কাছে ছয় দফা দাবি জানান। তাদের দাবি সমূহ হল ১) ভাষানটেক পুনর্বাসন প্রকল্প বাস্তবায়নে বাধা দূর করা। মেয়র আতিকুল ইসলাম কর্তূক কলমিলতা বাজারের ক্ষতিপূরণ প্রদানের জন্য সংশ্লিষ্ট নির্দেশ পালনের বাধ্য করা।
২) ভূমি মন্ত্রণালয় কর্তৃক এনএসপি ডিএল এর চুক্তির আদেশ প্রত্যাহার করা। ৩) ভাষানটেক প্রকল্প ব্যর্থ করার ষড়যন্ত্রে ভূমি মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্টদের নির্ধারণ ও শাস্তি দাবি জানায় এবং মহামান্য হাইকোর্টের তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি বিচার বিভাগ তদন্ত কমিটি করা। ৪) হাইকোর্টের রিট পিটিশন ৭৭৯/২০১০ অবজারভেশন অনুযায়ী সালিশি বোর্ডের মাধ্যমে সমাধান করা। ৫) ভাষানটেক পুনর্বাসন প্রকল্পের বিষয় দুর্নীতি দমন কমিশনে বন্ধ হওয়া তদন্ত পুনরায় চালু করা সেই সঙ্গে মেয়র আতিকের বিরুদ্ধে দেওয়া অভিযোগ জরুরী ভিত্তিতে তদন্ত করা। ৬) শহীদ পরিবার হিসেবে আমি নুরতাজ আরা ঐশী ও আমার পরিবার ব্যক্তিবর্গের জানমাল ও সম্পদের সুরক্ষা প্রদান করা। এবং সরকারি অন্যান্য সুবিধা মুক্তিযোদ্ধা পরিবার হিসেবে প্রদান করা।
ঐশী বলেন, এই বিষয়ে আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করি এবং ন্যায্য বিচারের দাবি জানাই।