শহর প্রতিনিধি : করোনা সংকটে নারায়ণগঞ্জে সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিক পালন করা মমতাময়ী মা উপাধি পাওয়া সালমা ওসমান লিপি করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। বুধবার রাতে মুঠোফোনে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন সালমা ওসমান লিপির স্বামী নারায়ণগঞ্জ- ৪ আসনের এমপি শামীম ওসমান। ওই সময় তিনি স্ত্রী জন্য দেশবাসির কাছে নিজ পরিবারের জন্য দেয়া ভিক্ষা প্রার্থনা করেন।
জানা গেছে, আক্রান্ত অবস্থায় লিপি ওসমান বাড়িতে চিকিৎসারত অবস্থায় মানুষের সেবায় নিয়োজিত রয়েছেন। আক্রান্ত হয়ে কাউকে বুঝতে না দিয়ে লিপি ওসমান শহরের বাবুরাইল দেওভোগ এলাকায় সড়ক দূর্ঘটনায় গুরুতর আহত প্যারালাইজ রোগীর বাড়িতে স্বেচ্ছাসেবী পাঠিয়ে আর্থিক সহায়তা দান করেন।
আর্থিক সহায়তা পৌছে দেয়া সমাজ কর্মী ফতুল্লা অক্টোফিস এলাকার বাসিন্দা রোমান চৌধুরী সুমন বলেন, “গত শনিবার লিপি ওসমানের হয়ে শহরের নয়াপাড়া এলাকায় সড়ক দূর্ঘটনায় গুরুতর আহত হুমায়ন কবীর কাবিলের জন্য আর্থিক সহায়তা পৌছে দেই। সেই সময় লিপি ওসমান করোনায় আক্রান্ত হলেও একবারের জন্য আমাদের বুুঝতে দেননি। প্যারালাইজড রোগী বাড়িতে আর্থিক সহায়তা পৌছে দিয়ে তিনি ওই সময় কাবিলে স্ত্রী নূপুরের সাথে মুঠোফোনে কথা বলেন। ওই সময় লিপি ওসমান প্রচন্ড অসুস্থ হয়ে ঠিকমত শ্বাস নিতে পারছিলেন না। কথা বলার সময় বারবার লিপি ওসমানকে শ্বাস কষ্ট হচ্ছে কিনা তা জিজ্ঞসা করলেও তিনি বলেন ঠিক আছি। সেই সময় তিনি শুধু এতটুকু বলেন আমি ঠিক আছি দোয় কর সবাই”।
প্যারেলাইজ রোগী স্ত্রী সোনিয়া আক্তার নুপুর বলেন বুধবার সকালে মুঠোফোনে বলেন, আমি একটি বারের জন্যও বুঝতে পারিনি লিপি ওসমান আমার সাথে মুঠোফোনে কথা বলার সময় উনি যে করোনায় আক্রান্ত হয়ে কষ্ট পাচ্ছেন। কথা বলার সময় কণ্ঠস্বর অসুস্থ মনে হয়েছে । ওই অবস্থায় দীর্ঘ সময় আমার সাথে কথা বলে আমার স্বামীর চিকিৎসা পরবর্তী আরো উদ্যো গ্রহণ করবেন বলে আশ্বাস প্রদান করেন”।
তিনি দোয়া প্রার্থনা করে বলেন, এমন জনপ্রতনিধির স্ত্রী কয়জন আছে যে নিজে জীবন সংকটে থাকে আরেকজন রোগীর বাড়িতে আর্থিক সহায়তা পাঠিয়ে খোঁজ খবর নিচ্ছেন।
লিপি ওসমান অসুস্থ এ খবর পেয়ে প্যারালাইজড রোগী হুমায়ন কবীর কাবিল এই প্রতিবেদককে বুধবার সকাল সাড়ে ১০ টায় ফোন করে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে বলেন, “ভাইগো আমি বিছানায় শোয়া । আমাকে ওযু করিয়ে দেয় আমার স্ত্রী। আমি এ অবস্থায় লিপি ভাবীর জন্য নামাজ আদায় করে দোয়া করবে। আমার মা নেই । আমি তার মধ্যে আমার মায়ের রূপ দেখেছি”। তিনি প্রতিবেদকের মাধ্যমে লিপি ওসমানকে জানান, আল্লাহর রহমতে ওনার কিছু হবে না। তার জন্য আমরা পরিবার দিনভর দোয়া করছি।
এ বিষয়ে শামীম ওসমান বলেন, অসুস্থ অবস্থায় যেখানে লিপি নিজের জীবন নিয়ে শংকিত সেখানে ও(লিপি) যখন আরেক মৃত্যুপথযাত্রী রোগীর খোঁজ খবর নিচ্ছিল আমি অনেকটা বিরক্তও হয়েছিলাম । বলছিলাম তুমি খুব অসুস্থ। কিন্তু এটা আল্লাহর রহমত । করোনায় আক্রান্ত হয়েও ও (লিপি) মানুষের জন্য কাজ করছে। আমাদের মানুষের দোয়া দরকার। আল্লাহ মানুষের দোয়া কবুল করেন। আমি আমার পরিবারের জন্য দোয়া ভিক্ষা চাচ্ছি। আপনাদের একজনের দোয়াও যদি আল্লাহ কবুল করেন; হয়তো আমার পরিবার সুস্থ হয়ে উঠবেন’।
প্রসঙ্গত করোনাকালে নারায়ণগঞ্জবাসীর পাশে যে ক’জন ছিলেন তাদের মধ্যে অন্যতম নারায়ণগঞ্জ জেলা মহিলা সংস্থার চেয়ারম্যান সালমা ওসমান লিপি। দেশের ক্রান্তিলগ্নে অতীতের ধারাবাহিকতায় বর্তমানেও ঐতিহ্যবাহী ওসমান পরিবার প্রশংসনীয় ভূমিকা অব্যাহত রেখেছেন সালমা ওসমান লিপি ও শামীম ওসমানসহ পরিবারের অন্য সদস্যরা। নারায়ণগঞ্জে করোনার সংক্রমনের শুরুতে অসহায়দের পাশে যখন কাউকে পাওয়া যাচ্ছিলো না, তখন সর্বপ্রথম নারায়ণগঞ্জ চাঁনমারী বস্তিতে ত্রান পাঠিয়ে মানুষের পাশে দাঁড়ান লিপি ওসমান। করোনা কালে কখনও খাদ্য নিয়ে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন তিনি। আবার কখনো করোনা আক্রান্ত পরিবারের জন্য বাড়িয়ে দিয়েছেন সহযোগীতার হাত। সংকট কালিন সময়ে করোনায় আক্রান্তদের ব্যবস্থা করেছেন চিকিৎসার। দিয়েছেন হাসপাতালে বেড ও অত্যাধুনিক অক্সিজেন সিলিন্ডার। অর্থ দিয়ে সহযোগীতা করেছেন হাজারও মানুষকে। যখনই খবর পেয়েছেন, কিংবা গণমাধ্যমে-স্যোশাল মিডিয়াতে কোন অসহায় মানুষের সংবাদ প্রকাশ হয়েছে লিপি ওসমান নিজেই ছুটে গিয়েছেন। কিংবা পাঠিয়েছেন তার প্রতিনিধি। দিয়েছেন সাহস, করেছেন সার্বিক সহযোগিতা । করোনার ভয়ে মানুষ লাশ ধরছে না। সেই সময় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের পাশে দাঁড়িয়ে পিপি থেকে শুরু করে নানা সরঞ্জাম দিয়ে সহযোগিতা করেছেন তিনি। করবস্থানে লাশ দাফনে বাধা দিলে নিজে ব্যবস্থা নিয়ে করোনা লাশ দাফন করিয়েছেন। ক্ষুধার জ্বালায় ঘুমের ঔষধ খেয়ে ঘুমিয়ে থাকা মানুষেরে বাসায় রান্না করা খাবার বিতরণ করেছেন। করোনার প্রথম থেকেই শহরের ভাসমানদের মাঝে রান্না করা খাবার বিতরণের আর্থিক সহায়তা দিয়ে পাশে দাঁড়ান লিপি ওসমান। করোনায় আর্থিক সংকটে যোগালি বনে যাওয়া ফুটবলার আরিফ নিপুনকে আর্থিক সহায়তা দিয়ে মাঠে ফেরান লিপি ওসামন । মূলত করোনার প্রথম থেকেই সাধারণ মানুণের পাশে দাঁড়িয়ে অনুকরণীয় দৃষ্টন্ত স্থাপন করেন ওসমান পারিবারের এই পুত্রবধূ।