নারায়ণগঞ্জ ০১:০৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
জুন মাসের ১৭ তারিখ কোরবানির ঈদ পালিত হওয়ার সম্ভবনা রিয়াদে নোভ আল আম্মার ইষ্টাবলিস্ট এর আয়োজনে দোয়া ও ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত রিয়াদে বেগম খালেদা জিয়ার রোগ মুক্তি কামনায় দোয়া ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত রিয়াদে জয়নাল আবেদীন ফারুক রিয়াদে বাংলাদেশ প্রবাসী সাংবাদিক ফোরামের ইফতার মাহফিলে প্রবাসীদের মিলন মেলা ফতুল্লা থানায় অভিযোগ করেও সাবেক সেনা পরিবার, পাশে পায়নি পুলিশ রিয়াদে প্রবাসী চাঁদপুর জেলা বিএনপির ইফতার ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত সৌদি আরবে “প্রবাসী নাশীদ ব্যান্ডের” উদ্যোগে দোয়া ও ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত নারায়ণগঞ্জ সিটি প্রেসক্লাবের ইফতার ও দোয়া মাহফিল অনুষ্টিত রিয়াদে সিলেট সদর উপজেলা প্রবাসীদের উদ্যোগে সংবর্ধণা ও ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত

বসন্ত আসে ফুলবনে

  • প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ০৯:১০:৩৫ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৪ ফেব্রুয়ারী ২০২২
  • ১৮৬ বার পড়া হয়েছে

অনলাইন ডেস্ক : ফাগুনের হাত ধরেই ঋতুরাজ বসন্তের আগমন। ঋতুরাজকে স্বাগত জানাতেই প্রকৃতির আজ এত বর্ণিল সাজ। বসন্তের এই আগমনে প্রকৃতির সাথে তরুণ হৃদয়েও লেগেছে দোলা।

সব কুসংস্কার পেছনে ফেলে, বিভেদ ভুলে, নতুন কিছুর প্রত্যয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়ার বার্তা নিয়ে বসন্তের উপস্থিতি। ফুল ফুটুক আর নাই ফুটুক, আজ বসন্ত… কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের অমিয় বাণীটি ঋতুরাজকে আলিঙ্গনের আহ্বান জানায়। ফুল ফোটার পুলকিত এই দিনে বন-বনান্তে কাননে কাননে পারিজাত রঙের কোলাহলে ভরে ওঠে চারদিক। কচিপাতায় আলোর নাচনের মতোই বাঙালির মনেও লাগে দোলা। হৃদয় হয় উচাটন। পাতার আড়ালে-আবডালে লুকিয়ে থাকা বসন্তের দূত কোকিলের মধুর কুহু কুহু ডাক ব্যাকুল করে তোলে অনেক বিরহী অন্তর।

পহেলা ফাল্গুন বা বসন্ত এলেই মনে পড়ে যায় রবীন্দ্রনাথের সেই পরিচিত গান ‘আহা আজি এ বসন্তে, এত ফুল ফুটে/ এত বাঁশি বাজে, এত পাখি গায়…।’ এ সময়েই শীতের জীর্ণতা সরিয়ে ফুলে ফুলে সেজে ওঠে প্রকৃতি। গাছে গাছে নতুন পাতা, স্নিগ্ধ সবুজ কচিপাতার ধীরগতিতে বাতাসের সঙ্গে বয়ে চলা জানান দেয় নতুন কিছুর।

নবপ্রবর্তিত বর্ষপঞ্জিতে গতকাল ছিল মাঘের শেষ দিন। ষড়ঋতুর এদেশে প্রতি বছরের মতো প্রকৃতিতে এসেছে ফাগুন। বাংলা বর্ষপঞ্জিতে সংশোধনের কারণে বাংলা ফাল্গুন মাসের প্রথম দিন ও ভালোবাসা দিবস একই দিনে পড়ছে। আজ দিনভর চলবে তাদের বসন্তের উচ্ছ্বাস প্রকাশ। ফোন, ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলবে বসন্তের শুভেচ্ছা বিনিময়।

পলাশ, শিমুলেরা পাপড়ি মেলে ধরেছে গাছে গাছে। এ ফুলের সৌন্দর্য্যে চারিপাশে যেন সুখকর উৎসবের রোমাঞ্চ বয়ে যায়। আম্র-মুকুলের মনকাড়া গন্ধে বসন্তের রঙ লেগেছে বেশ আগেই। ‘ও পলাশ ও শিমুল, কেন এ মন মোর রাঙালে/ জানি না জানি না আমার এ ঘুম কেন ভাঙালে…’, সম্প্রতি পরলোকগত লতা মুঙ্গেশকারের কালজয়ী এ গান শিমুল-পলাশকে ভীষণ মনে করিয়ে দেয় আমাদের। এমন অজস্র গানের কথায় কিংবা কবিদের কবিতার ছন্দে উঠে এসেছে বসন্তের এই প্রতীক। পলাশ-শিমুল আমাদের বাঙালির ফুল। ফাগুনের-বসন্তের-ভালোবাসার ফুল।

‘রাঙ্গা হাসি রাশি রাশি অশোক পলাশে..’ পলাশের রূপে মুগ্ধ হয়ে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখেছিলেন এই কবিতা। বসন্তের বার্তা বাহক বলা হয় পলাশ ফুলকে। পলাশ ছাড়া বসন্ত যেন পূর্ণতা পায় না। প্রকৃতি তার আপন লীলায় মত্ত হয়ে পত্রহীন গাছের নগ্ন ডালে উজ্জ্বল লাল বা গাড় কমলা রঙের পলাশ ফুটিয়ে মানুষের আদর ভালোবাসা বাড়িয়ে তোলে।

বসন্তের সাজ সাজ সুন্দরের বন্দনা জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের গানেও গুঞ্জরিত হয়ে উঠেছে। কবি লিখেছেন- ‘আসে বসন্ত ফুলবনে/ সাজে বনভূমি সুন্দরী.. চরনে পায়েলা রুমুঝুমু/ মধুপ উঠিছে গুঞ্জরী…’ গ্রামবাংলার চিরাচরিত বসন্তের রূপ একসময় দেখা যেত আমাদের এই নগরেও। ইট-কাঠ-লোহার অট্টালিকার ভিড়ে হারিয়ে গেছে শত প্রজাতির হাজারো ফুল-ফলের বৃক্ষরাজি।

মোগল সম্রাট আকবর প্রথম বাংলা নববর্ষ গণনা শুরু করেন ১৫৮৫ সালে। নতুন বছরকে কেন্দ্র করে ১৪টি উৎসবের প্রবর্তন করেন তিনি। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে বসন্ত উৎসব। তখন অবশ্য ঋতুর নাম এবং উৎসবের ধরনটা এখনকার মতো ছিল না।

বঙ্গাব্দ ১৪০১ সাল থেকে প্রথম বসন্ত উৎসব উদযাপন করার রীতি চালু হয়। তাই পহেলা ফাল্গুন বা বসন্ত উৎসব কেবল উৎসবে মেতে ওঠার সময় নয়। এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে বাংলার গৌরবময় ঐতিহ্য, বাঙালিসত্তা। সে ঐতিহ্যের ইতিহাসকে ধরে রাখতে পারলেই বসন্ত উৎসবের সঙ্গে নতুন প্রজন্ম ছড়িয়ে দিতে পারবে বাঙালি চেতনাকে।

ট্যাগস :

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

জুন মাসের ১৭ তারিখ কোরবানির ঈদ পালিত হওয়ার সম্ভবনা

বসন্ত আসে ফুলবনে

আপডেট সময় : ০৯:১০:৩৫ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৪ ফেব্রুয়ারী ২০২২

অনলাইন ডেস্ক : ফাগুনের হাত ধরেই ঋতুরাজ বসন্তের আগমন। ঋতুরাজকে স্বাগত জানাতেই প্রকৃতির আজ এত বর্ণিল সাজ। বসন্তের এই আগমনে প্রকৃতির সাথে তরুণ হৃদয়েও লেগেছে দোলা।

সব কুসংস্কার পেছনে ফেলে, বিভেদ ভুলে, নতুন কিছুর প্রত্যয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়ার বার্তা নিয়ে বসন্তের উপস্থিতি। ফুল ফুটুক আর নাই ফুটুক, আজ বসন্ত… কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের অমিয় বাণীটি ঋতুরাজকে আলিঙ্গনের আহ্বান জানায়। ফুল ফোটার পুলকিত এই দিনে বন-বনান্তে কাননে কাননে পারিজাত রঙের কোলাহলে ভরে ওঠে চারদিক। কচিপাতায় আলোর নাচনের মতোই বাঙালির মনেও লাগে দোলা। হৃদয় হয় উচাটন। পাতার আড়ালে-আবডালে লুকিয়ে থাকা বসন্তের দূত কোকিলের মধুর কুহু কুহু ডাক ব্যাকুল করে তোলে অনেক বিরহী অন্তর।

পহেলা ফাল্গুন বা বসন্ত এলেই মনে পড়ে যায় রবীন্দ্রনাথের সেই পরিচিত গান ‘আহা আজি এ বসন্তে, এত ফুল ফুটে/ এত বাঁশি বাজে, এত পাখি গায়…।’ এ সময়েই শীতের জীর্ণতা সরিয়ে ফুলে ফুলে সেজে ওঠে প্রকৃতি। গাছে গাছে নতুন পাতা, স্নিগ্ধ সবুজ কচিপাতার ধীরগতিতে বাতাসের সঙ্গে বয়ে চলা জানান দেয় নতুন কিছুর।

নবপ্রবর্তিত বর্ষপঞ্জিতে গতকাল ছিল মাঘের শেষ দিন। ষড়ঋতুর এদেশে প্রতি বছরের মতো প্রকৃতিতে এসেছে ফাগুন। বাংলা বর্ষপঞ্জিতে সংশোধনের কারণে বাংলা ফাল্গুন মাসের প্রথম দিন ও ভালোবাসা দিবস একই দিনে পড়ছে। আজ দিনভর চলবে তাদের বসন্তের উচ্ছ্বাস প্রকাশ। ফোন, ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলবে বসন্তের শুভেচ্ছা বিনিময়।

পলাশ, শিমুলেরা পাপড়ি মেলে ধরেছে গাছে গাছে। এ ফুলের সৌন্দর্য্যে চারিপাশে যেন সুখকর উৎসবের রোমাঞ্চ বয়ে যায়। আম্র-মুকুলের মনকাড়া গন্ধে বসন্তের রঙ লেগেছে বেশ আগেই। ‘ও পলাশ ও শিমুল, কেন এ মন মোর রাঙালে/ জানি না জানি না আমার এ ঘুম কেন ভাঙালে…’, সম্প্রতি পরলোকগত লতা মুঙ্গেশকারের কালজয়ী এ গান শিমুল-পলাশকে ভীষণ মনে করিয়ে দেয় আমাদের। এমন অজস্র গানের কথায় কিংবা কবিদের কবিতার ছন্দে উঠে এসেছে বসন্তের এই প্রতীক। পলাশ-শিমুল আমাদের বাঙালির ফুল। ফাগুনের-বসন্তের-ভালোবাসার ফুল।

‘রাঙ্গা হাসি রাশি রাশি অশোক পলাশে..’ পলাশের রূপে মুগ্ধ হয়ে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখেছিলেন এই কবিতা। বসন্তের বার্তা বাহক বলা হয় পলাশ ফুলকে। পলাশ ছাড়া বসন্ত যেন পূর্ণতা পায় না। প্রকৃতি তার আপন লীলায় মত্ত হয়ে পত্রহীন গাছের নগ্ন ডালে উজ্জ্বল লাল বা গাড় কমলা রঙের পলাশ ফুটিয়ে মানুষের আদর ভালোবাসা বাড়িয়ে তোলে।

বসন্তের সাজ সাজ সুন্দরের বন্দনা জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের গানেও গুঞ্জরিত হয়ে উঠেছে। কবি লিখেছেন- ‘আসে বসন্ত ফুলবনে/ সাজে বনভূমি সুন্দরী.. চরনে পায়েলা রুমুঝুমু/ মধুপ উঠিছে গুঞ্জরী…’ গ্রামবাংলার চিরাচরিত বসন্তের রূপ একসময় দেখা যেত আমাদের এই নগরেও। ইট-কাঠ-লোহার অট্টালিকার ভিড়ে হারিয়ে গেছে শত প্রজাতির হাজারো ফুল-ফলের বৃক্ষরাজি।

মোগল সম্রাট আকবর প্রথম বাংলা নববর্ষ গণনা শুরু করেন ১৫৮৫ সালে। নতুন বছরকে কেন্দ্র করে ১৪টি উৎসবের প্রবর্তন করেন তিনি। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে বসন্ত উৎসব। তখন অবশ্য ঋতুর নাম এবং উৎসবের ধরনটা এখনকার মতো ছিল না।

বঙ্গাব্দ ১৪০১ সাল থেকে প্রথম বসন্ত উৎসব উদযাপন করার রীতি চালু হয়। তাই পহেলা ফাল্গুন বা বসন্ত উৎসব কেবল উৎসবে মেতে ওঠার সময় নয়। এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে বাংলার গৌরবময় ঐতিহ্য, বাঙালিসত্তা। সে ঐতিহ্যের ইতিহাসকে ধরে রাখতে পারলেই বসন্ত উৎসবের সঙ্গে নতুন প্রজন্ম ছড়িয়ে দিতে পারবে বাঙালি চেতনাকে।